আইকন নিউজ ডেস্কঃ
চরম দারিদ্র্যকে জয় করে অবশেষে বিসিএস ক্যাডারে মানবিক ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্টিত পেয়েছেন ডাঃ আল আমিন। তাঁর নিজের লেখাতেই ফুটিয়ে তুলেছেন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ও নিজের একাগ্রতায় জয় করা সেই দুঃসময়ের কাহিনী। নিম্নে তা তুলে ধরা হলঃ
“হাইস্কুল জীবনে কত দিন যে ভ্যান চালিয়েছি, মানুষের বাড়িতে কামলা খেটেছি তার হিসাবটা হয়তো মিলাতে পারবো না। ছোট বেলা হতেই দেখে এসেছি বাবা রিক্সা চালান, কত কষ্ট করে আমাদের পড়াশোনা করিয়েছেন। মানুষে অনেক কথাই বলেছেন, তবুও বাবা দমে যাননি। তার স্বপ্ন, ছেলেকে পড়াশোনা করাবেন।
আমার মনে আছে, যখন SSC পরীক্ষা দিবো তখন বোর্ডের ফিস জোগার করতে পারিনি। আমাদের উপজেলার সন্মানিত চেয়ারম্যান সাহেব সে ফিসের টাকা দিয়ে দিলেন। প্রাইভেটও তেমন পড়তে পারিনি। যতটুকু পড়েছি শ্রদ্ধেয় স্যাররা ফ্রি পড়িয়েছেন। স্যারদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা সব সময়।
SSC পরীক্ষার পরে যখন রেজাল্টের পূর্ব পর্যন্ত বন্ধ পেলাম তখন আমি খুব ভালো ভ্যান চালক! বিভিন্ন জায়গা হতে কাঁচা সবজী, তরকারি কিনে এসে হাটে বিক্রি করতাম। এর পরে হঠাৎ এক দিন SSC এর রেজাল্ট বের হলো পেলাম Golden A+. আমার স্কুল হতে, আমার ব্যাচই প্রথম A+ পেল। স্যাররাও খুব খুশি। কিন্তু এর পরে কোথায় ভর্তি হবো, কি করবো? কিছুই জানি না।
এর মাঝে এক দিন হঠাৎ গ্রাম সম্পর্কিত এক দাদুর কাছে শুনতে পেলাম ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজে গরীব মেধারীদের কয়েক জনকে ফ্রি পড়াবে। সেই দিন ঐ দাদুর সাথে প্রথম ঢাকা আসলাম। এটাই প্রথম ঢাকা আসা আমার। ঢাকায় এসে দাদুকে প্রশ্ন করেছিলাম,, দাদু, রাস্তার দু পাশে এতো তার কেন!!?
যাই হোক, ক্যামব্রিয়ান কলেজে নিয়ে গেলেন আমার গ্রাম সম্পর্কীয় এক কাকা। ভর্তি করে দিলেন সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ২ বছর পড়ার সুযোগ পেলাম। কিন্তু বাঁধা সাজলো, আমারতো থাকার জায়গা নেই ঢাকাতে। ঠিক তখন সেই আমার গ্রাম সম্পর্কীয় কাকা বললেন, আমার বাসায় থেকে পড়াশোনা করবি। যার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। ২টা বছর তার বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি।
HSC তেও পরীক্ষা দিয়ে GPA 5 পেলাম। মেডিকেলের জন্য কোচিং করার টাকা ছিল না। তখন কোনো মতে ৩০০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হলাম ঢাকার শান্তিনগরে “রেটিনা কোচিং সেন্টারে। বাকি টাকাটা কোচিং হতে ফ্রি করে দিলেন।
ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেলাম।
একটি কথা না বললেই নয়। যখন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেলাম তখন ভর্তি হবার টাকা নেই আমার কাছে। ভর্তি হবার জন্য ৬০০০ টাকা দিলেন আমার এক গ্রাম সম্পর্কীয় আরেক দাদু। মেডিকেলে ভর্তি হবার পরে,, ফরিদপুর অনেক টিউশনি করা শুরু করলাম। সে টাকা দিয়ে আমি চলতাম সাথে বাড়িতে ভাই-বোনদের জন্য পাঠাতাম। আমার দু বোনকে সরকারীভাবে নার্সিং এ ডিপ্লোমা পড়িয়েছি। তারা এখন দু জনেই ঢাকাতে চাকরী করেন। ছোট ভাই এবার SSC পরীক্ষা দিবে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমি বিভিন্ন জনের কাছে ঋণী।
আমার সেই রিক্সা চালক বাবার, ভ্যান চালক ছেলে আজ সরকারী ১ম শ্রেনীর গেজেটেড কর্মকর্তা।
আজ দেশের মানুষকে আমার অনেক কিছু দেবার সময় এসেছে। সে সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।
সবার কাছে দোয়া চাই যেন এক জন ভালো মানবিক ডাক্তার হতে পারি আমি। দরিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা আমার বাবা মায়ের জন্য দোয়া করবেন”।
-Dr.Al Mamun
Faridpur Medical college and Hospital