এম আর আয়াজ রবি।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীনে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩নং ঘুংধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে টোল পয়েন্টে টোল আদায়ের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও চাদাবাজিরসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সূত্রে উল্লেখ, বিগত ১৭/০৬/২০২১ ইংরেজি তারিখের উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক টোল ইজারা বা টেন্ডারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুময় তংচংজ্ঞা পিতা, চৈতু অং তংচংজ্ঞা, ঠিকানাঃ বড়ই তলীপাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সর্বোচ্চ দরদাতা (৩,২৭,০০০/- তিন লক্ষ সাতাশ হাজার টাকায়) হিসেবে মনোনীত হয়ে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত ও সরবরাহকৃত তালিকা মতে ও কিছু শর্তসাপেক্ষে টোল আদায়ের কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি প্রাপ্ত হয়। শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ও সরবরাহকৃত রেইট অনুযায়ী টোল আদায় করতে হবে, পরিষদ কর্তৃক সকল নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে, বিনা রশিদে কোন টোল আদায় করা যাবেনা, নির্ধারিত রেইটের অতিরিক্ত টোল আদায় প্রমানিত হলে ইজারা বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ইত্যাদি।
উক্ত কার্যাদেশ অনুযায়ী গত ১লা জুলাই-২০২১ ইংরেজি তারিখ থেকে উক্ত টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যক্রম শুরু থেকেই কার্যাদেশের শর্ত ঊপেক্ষা করে বেশকিছু অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও চাদাবাজির মত ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া যায়। তাছাড়া কথায় কথায় বিভিন্ন অজুহাতে তরিতরকারি, পান, কলা, পাহাড়ি সবজি ও অন্যান্য পন্যের বেপারীকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে অনেকেই সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ভোক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন, মুসলেহ (২৪) পিতাঃ মৃত কালু সওদাগর, আলী হোসেন (২৮) পিতাঃ শামসুল আলম, শাহ আলম (৪০) পিতাঃ জাফর আলম। তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন তরিতরকারি, পান, সবজি বেপারী বলে জানা গেছে। উক্ত ঘটনা স্থানীয় ৮ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি বদিউল আলমকে জানালে, তিনি উভয় পক্ষকে শুনে উক্ত ঘটনার বিহীত করার চেষ্টা করেও উভয় পক্ষের অসহযোগিতার কারনে তিনি সফল হননি বলে অত্র প্রতিবেদককে জানান। পরে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাংগীর আজিজকে ব্যাপারটি অবহিত করেন বলেও জানান।
অত্র প্রতিবেদক জানতে পারেন, অনুময় তংচংজ্ঞা প্রকাশ জারং ও বদিউল আলম নামক ব্যক্তি যৌথভাবে উক্ত ইজারায় টাকা বিনিয়োগ করলেও কিন্ত টেন্ডার বা ইজারা গ্রহন করা হয় অনুময় তংচংজ্ঞার নামে। উক্ত ইজারার টোল গ্রহনে দু’জনে পালা করে টোল আদায় করেন অর্থাৎ বদিউল আলম সকাল থেকে মাগরিব পর্যন্ত এবং জারং মাগরিব থেকে রাত অবধি টোল আদায় করেন বলে জানা যায়। স্থানীয় বেপারীরা অভিযোগ করেন বদিউল আলম টোল আদায়ে তেমন ব্যতিক্রম না করলেও অনুময় তংচংজ্ঞা কিন্তু সরকার ঘোষিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে নির্দিষ্ট রেটের অতিরিক্ত টোল আদায় করেন এবং অতিরিক্ত টোল দিতে কেহ গড়িমসি করলে বেপারীদের মারধর করেন। বিভিন্ন হত্যা, গুম, খুনের হুমকি দেবার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে অনুময় তংচংজ্ঞার সাথে অত্র প্রতিবেদক আলাপ কালে, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,”সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষিত নিয়মানুসারে আমি টোল আদায় করছি। কোন দিন কেহ প্রমান দিতে পারবে না আমি সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে টোল আদায় করেছি। কিছু অসাধু বেপারী তরিতরকারি পরিবহন বা বহন করার সময় টোল দেয় না কারন তারা বলেন, বাজারে তরিতরকারি বিক্রয় করে টাকা পেলে তারপরে টোল প্রদান করব। পরে যখন টোল খুজি তারা গড়িমসি করে, বিভিন্ন অজুহাতে টোল দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আমার সাথে কথা কাটাকাটি হয়, বেপারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, আমাকে মারধর করে। আমি তাদেরকে কোন দিন গায়ে হাত তুলিনি। টোল আদায় না করে আমার উপর তারা আক্রমন চালাতে উদ্ধত হয়। যদিও বা আমি টোল আদায়ের জন্য ওয়ার্ড ৮ ও ৯ নং অনুমোদন প্রাপ্ত কিন্ত ওয়ার্ড ৯ এ বিজিবি ও টহলরত পুলিশ আমাকে ঐ এলাকায় টোল আদায় করতে নিষেধ করাতে আমি ওয়ার্ড ৯ এ টোল আদায় করতে পারিনা যা আমি ইউনিয়ন পরিষদ বরাবর জানিয়েছি, কিন্তু কোন সুফল এখনও পাইনি ”।
সবজি বেপারীদের সাথে আলাপকালে, বেপারী মুসলেহ বলেন, “ জারং আমাদেরকে অতিমাত্রায় জুলুম করছে। তিনি সরকার নির্ধারিত নিয়ম, শর্ত না মেনে, আমাদের প্রতিটি সবজির গাড়ি ও ঝুড়ি থেকে বেশি পরিমান টোল আদায় করছে। ৯ নং ওয়ার্ডে বিজিপি টোল নেওয়া বন্ধ করে দেবার পর থেকে ৮ নং ওয়ার্ড থেকে টোল নেওয়ার পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছে, সেই অতিরিক্ত টোল প্রদান করা আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। কারন আমরা এই সবজি বিক্রী করে কয় টাকা বা পাই। সব যদি টোল ও বাজারে হাসিল দিতে দিয়ে দিতে হয়, আমরা গরীব মানুষ, বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা, বঊ বাচ্চা নিয়ে কিভাবে চলব। আয়ের বিকল্প কোন রাস্তা থাকলে আমরা এই সবজি বিক্রয় বন্ধ করে দিতাম”।
বেপারী আলী হোসেন বলেন, “ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কাছ থেকে দু’বার টোল গ্রহন করা হয়। যেমন উক্ত পয়েন্টে আমাদের অনেক পানের বরজ ও অন্যান্য সবজির বাগান। আমরা যদি পানের বরজ থেকে পান ছিড়ে বাড়িতে নেবার সময় একবার টোল গ্রহন করা হয় আবার বাড়ি থেকে বিক্রয়ের উদ্দ্যেশ্যে নিয়ে যাবার সময় আবার টোল গ্রহন করে। কোনভাবে দু’বার টোল দিতে অস্বীকৃতি জানালে জারং আমাদেরকে টানা হেছড়া, মারধর করে। জারং এর জ্বালায় আমরা রীতিমত অতীষ্ট। কিছু বললেই আমাদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গোষ্টির ভয় দেখায়। আরও বলে তোমরা এখানে কেন আস? এটি পাহাড়িদের এলাকা।“
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ সাহেবের সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে, উক্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যাপারটা আমি কিছুটা অবগত। স্থানীয় মেম্বার বদিউল আলমকে উভয়পক্ষকে শুনে সমাধান করার নির্দেশ দিয়েছি। ইতিপুর্বে ইউনিয়ন পর্যায়ে টোল ইজারার কোন ব্যবস্থা ছিলনা। নতুনভাবে ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়ে কিছু অসামঞ্জস্যতা ও অনিয়ম হচ্ছে, হওয়া স্বাভাবিক। আমি মনেকরি যা আস্তে আস্তে কমে আসতে বাধ্য। মুলতঃ স্থানীয় কিছু মানুষের অসহযোগিতা ও নেতিবাচক মনমানসিকতার কারনে এরুপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইজারা গ্রহীতা জারং উন্মুক্ত টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরে উক্ত কাজটি করার সুযোগ প্রাপ্ত হয়েছে। এখানে টেন্ডারে অংশগ্রহনকারী অন্যান্যরা ও কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ কাজের গতিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করছে বলে আমার কাছে খবর আছে। আমি ঢাকায় ছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটি তেমন জটিল নয়, বিবদমা দু’পক্ষের মধ্যে সামান্য ভুল বুঝাবুঝি মাত্র। দেখি এক ফাঁকে এসে উভয়পক্ষকে শুনে ব্যাপারটা সমাধান করে দেব ইনশা আল্লাহ।”
স্থানীয় সাধারন বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, তারাও চায় বিবদমান উভয় পক্ষকে শুনে স্থানীয়ভাবে ব্যাপারটা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করার জন্য। না হয় সামান্য ভুলে, উভয় পক্ষের মধ্যে বাড়াবাড়ি, হাতাহাতি, মারামারি, খুনাখুনি বা রক্তপাত সৃষ্টি হয়ে আইন শৃংখলার অবনতি পর্যায়ে পর্যবসিত হবে, যা কোনভাবেই কারও কাম্য নয়।
আইকন নিউজটুডে /আর/১৩০৯২০২১