এম আর আয়াজ রবি,
২০১৭ সালের ২৫ শে আগষ্ট তারিখে পার্শ্ববর্তী দেশের বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা অধিবাসীদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী শেখ হাসিনার বদান্যতায় সীমান্তবর্তী উখিয়া টেকনাফে আশ্র্য় প্রদান করে উখিয়া টেকনাফের হোস্ট কমিউনিটির মানুষগুলো যে মানবতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন তার ষোলকলা কানায় কানায় প্রতিদান(!) দেবার জন্য আজ সদা প্রস্তুত তারা! সাথে যুক্ত আছেন আমাদের কথিত দেশ ও জনগনের সেবক, সাধারন মানুষের ট্যাক্সের টাকায় জীবন নির্বাহ করা আমলারা! আজ তারা কেন সেই মানবতার ধারক ও বাহক স্থানীয় জনগোষ্টির বিরুদ্ধ আচরণ করছে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। কেন নিজ বাসভুমে স্থানীয়রা আজ পরবাসী?
ঠিক কাদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে এবং কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্যাম্পে নিয়োজিত সিআইসি ও এপিবিএন পুলিশ সদস্যরা হোস্টদের বসত বাড়ি উচ্ছেদ করে প্রতিনিয়তই তাদের নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, সেটা সবাই অবগত। এখন প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক- সরকারের নিয়োজিত প্রতিনিধি ও সংস্থার কাছে যদি স্থানীয়রা নিরাপত্তা না পায়, নিরাপত্তা বোধ না করে, তাহলে উগ্রবাদী রোহিঙ্গাদের কাছে স্থানীয়দের নিরাপত্তা কোথায়? ক্যাম্প প্রশাসনের অতিমাত্রায় রোহিঙ্গাপ্রীতি ও স্থানীয়দের প্রতি বিদ্বেষী বা বিমাতাসুলভ আচরণ দিন দিন রোহিঙ্গাদের কাছে হোস্টদের প্রতি নেতিবাচক বার্তা বহন করছে এবং রোহিঙ্গাদের অতিমাত্রায় আগ্রাসী মনোভাব তৈরী করছে, যা হোস্টদের জন্য মারাত্মক বিপদজনক বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। এটি গেস্ট ও হোস্ট কমিউনিটির সহবস্থানে প্রতিকুল আবহ সৃষ্টি করছে নিশ্চয়ই।
আজকে হোস্ট কমিউনিটির সদস্যরাই সবচেয়ে অসহায়, নিরাত্তাহীন, সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত! মানবতার পরাকাষ্ঠা দেখানো সীমান্ত এলাকা উখিয়া টেকনাফের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীই আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। কারন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সরকারের উপরে আমলা সরকার রোহিঙ্গাদের স্বার্থরক্ষার জন্য অকাতরে কাজ করে যাচ্ছে। সাথে আছে দেশি বিদেশি এনজিও সংস্থাসমুহ। এ যেন দেশের ভিতরে অন্য দেশ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেশীয় আইন কতটুকু কার্যকর ভুক্তভোগী মাত্রই ওয়াকেবহাল! ঠিক কি কারনে আমাদের আমলারা হোস্ট কমিউনিটির জন্য বিমাতাসুলভ আচরণ করেন তারাই ভাল জানবেন।
অত্র এলাকায় হোস্ট কমিউনিটির কোন এক্সট্রা চাপ নেই, নেই কোনপ্রকার বাদ, প্রতিবাদ, ক্ষোভ, বিক্ষোভ, দাবি আদায়ের কোন কার্যকর কর্মসূচি। নেই কোন প্রেসার গ্রুপ, অধিকার আদায় ও বাস্তবায়নের কোন দল বা সংস্থা। আমলারা আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণে তেমন কোন আন্তরিক বলে মনে না হবার কারণগুলো অনুসন্ধানের সময় এসেছে। সময় এসেছে এখন অনুসন্ধান করে দাঁত ভাঙ্গা প্রতিউত্তর দেবার। কিন্তু আমাদের জনপ্রতিনিধিরা, সুশীল সমাজের সদস্যবৃন্দ, সচেতন মহল, সর্বসাধারণ কিন্তু হোস্টদের ব্যাপারে অত্যধিক গাফেল বা আন্তরিক নয়।এমতাবস্থায় তারা ছমুদা খাতুনের ঘটনাটা শুধুই স্বাভাবিক ঘটনা বলে পার পেয়ে যাবার সুত্র খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। তাই এগুলো আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কাছে নিছক মামুলি ব্যাপার! তাদেরকে দেশীয় আইনে কোনপ্রকার জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে কি?
আজকে ছমুদা খাতুনকে নিজ ভিটাভুমি থেকে উচ্ছেদ করে কোন পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ক্যাম্প ইনচার্জ সাহেবরা কাজ করে যাচ্ছেন? তাদের দেশপ্রেম কি ভোঁতা হয়ে পড়ছে? মানবতাবোধ কি নির্বাসনে গেছে? স্থানীয় জনসাধারণকে তাদের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ সংরক্ষণে আপনাদের এত ব্যতিব্যস্ত থাকার হেতু কি? জনম জনম রোহিঙ্গা সমাস্যা জিইয়ে রাখার জন্য যারা উঠে পড়ে লেগেছে, তাদের সাথে আপনাদের কালো হাত মুষ্টিবদ্ধ নয় তো? তাহলে ছমুদা খাতুনরা আজ কেন গুমের শিকার হবে? তাদের নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক দায়িত্বের বাইরে কি?
পরিশেষে বলতে চাই, হোস্ট কমিউনিটির স্বার্থ সংরক্ষণে, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে তাঁদের পীঠ দেয়ালে ঠেকলে কিন্তু ঘুমন্ত ভিসুভিয়াসের লাভার নিঃস্বরণ ঠেকানো শুধু কঠিন হবে না, রীতিমতো অসাধ্যও হবে।