এম আর আয়াজ রবি।
বেশি দিন পূর্বের কথা নয় কিন্তু-একটি পরিসংখ্যান পড়েছিলাম, বাংলাদেশের চাকুরির বাজারে সরকারি চাকুরীর স্থান দখল করে আছে মোট চাকুরির প্রাপ্তির ৫%। বাকি ৯৫% চাকুরী বেসরকারি খাতে আত্মনিয়োগ করা। আবার সরকারি চাকুরীর কত ভাগ বিসিএস ক্যাডার ক্যাটাগরিতে তা তেমন হিসেব জানা না থাকলেও তা মোট চাকুরি প্রাপ্তদের পয়েন্ট জিরো সামথিং হবে বৈকি এবং মোট সরকারি চাকুরেদের হিসেবে ৫% এর উপরে হবে বলে মনে হয় না! সরকারি চাকুরে মানে প্রজাতন্ত্রের চাকর। সাধারন জনগন যদি রাষ্ট্রের মালিক হন, তাহলে সরকারি চাকুরে নিশ্চয়ই সেই মালিকদের প্রজা বা সেবক। কিন্তু আমরা আমজনতা নিজেরা রাষ্ট্রের মালিকানার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে সেইসব প্রজাতন্ত্রের সেবকদেরকে দেবতা তুল্য নস্য করি! কারণ আমরা আমাদের সার্বিক অবস্থানের কথা, শক্তি- সামথ্য ও ক্ষমতার কথা ভুলে যায় বা নিজেরাই খর্ব করে থাকি। আমরা শাসকরাই সেসব সেবকদের অক্সিজেন, হ্রদপিন্ড, বেঁচে থাকার একমাত্র আধার বলে অভিহিত করি। এটি নিশ্চয়ই আমাদের অদক্ষতা ও অপরিনামদর্শীতার ফসল।
যুগে যুগে রাজনীতিবিদরাই মানুষ, দেশ ও পৃথিবীর ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের জন্য কাজ করে গেছেন, যাচ্ছেন। সুষ্ঠু, ইতিবাচক গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি গণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবে, এটাই স্বাভাবিক ও বাস্তবতা। কিন্তু অধিকতর আমলা নির্ভর রাজনীতি রাজনীতির মুল স্প্রীডকে বাঁধাগ্রস্ত করে অনেকক্ষেত্রে মৌল রাজনীতিকে মূলোৎপাটন করে রাজনীতির নিজস্ব পথচলা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যকে শ্লথ করে দেয়। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেকটা সেই পথে অনেকদুর অগ্রসর হয়ে পড়েছে, কোনভাভেই কাম্য নয়। এখনই এ অবস্থার লাগাম টানার সময়। দেশ শাসনের ভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর ছেড়ে দেওয়াই উচিত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যতটুকু জনগনের কাছাকাছি থেকে আমজনতার পালস বুঝবেন সরকারি আমলা বা বিসিএস ক্যাডাররা তা অনুভব করতে পারবেন না কোনদিন
তাই বলা হয়ে থাকে-বিসিএস ক্যাডার অন্যান্য সরকারি চাকরির মত নেহায়েত একটি চাকরি। পার্থক্য শুধু গ্রেডে। যদিও বা দেশের মোট চাকুরিজীবির ৫% সরকারি চাকুরে তারমধ্যে অতি স্বল্প সংখ্যক কিন্তু সরকারি অর্থ লোপাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল অবশ্য অবেক দেশপ্রেমিক সরকারি চাকুরে যে নেই-যারা সততা, কর্মদক্ষতা, কর্তব্য কাজে অবিচল থেকে দেশ মাতৃকার সেবা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে দেশের মোট চাকুরির ৯৫% বেসরকারি চাকুরে তারা অধিকাংশই কিন্তু দেশের জন্য, দেশের অগ্রগতির জন্য, দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত করার জন্য প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সাথে প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্স এর কথা বলাই বাহুল্য! অথচ আমরা এই সরকারি বিসিএস ক্যাডারদেরকে এতটাই অতিরঞ্জিত করে ফেলেছি যে দেশে শুধু চাকরি একটাই তা হচ্ছে বিসিএস ক্যাডার বা আমলারা !!
আমাদের এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।চলুন আমরা সরকারি, বেসরকারি, ব্যবসায়ী, দেশের সাধারণ মানুষ-কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা করতে শিখি, তাদের মুল্যায়ন করতে শিখি।বিসিএস ক্যাডার ভাইদের অতিরিক্ত তৈল মর্দন থেকে বিরত থাকি। তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক আইনে জনগণের সেবা করার সুযোগ প্রদানে সহযোগিতা করি এবং অতিমাত্রায় তৈলাক্ত না করে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেই। মনে রাখতে হবে-দেশ ও আমজনতার সেবা করার শপথ নিয়েই তিনি বা তাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।
লেখকঃ কলামিস্ট এবং প্রেসিডেন্ট-বাংলাদেশ জাতীয় সাংবাদিক ফোরাম (BNJF) উখিয়া উপজেলা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট-উপজেলা প্রেসক্লাব উখিয়া।