আইকন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রোহিঙ্গাদের দ্রুত তাদের নিজভুমে (মায়ানমারে) প্রত্যাবাসনের নানা দাবী নিয়ে আজ রোববার এক মহাসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এই সমাবেশের নাম দিয়েছে তারা “গো হোম ক্যাম্পেইন”।
জানা গেছে, আগামী ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ১৯ জুন-২০২২ তারিখে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একসঙ্গে পৃথক পৃথক স্থানে কয়েকটি সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এসব সমাবেশে তারা গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবী তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
গো হুম ক্যাম্পেইনের একটি ব্যানারের ভার্চুয়াল কপি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। সেখানে আয়োজক হিসেবে নির্দিষ্ট কোন সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে “নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী” হিসেবে আয়োজকের স্থলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ আগষ্ট ক্যাম্পে প্রথমবারের মতো বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত মাস্টার মুহিববুল্লাহর নেতৃত্বে। কিন্তু এবারের বিশাল সমাবেশে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই বিষয়টি এখনো গোপন রেখেছে রোহিঙ্গারা।
তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পে এবারও সমাবেশ আয়োজনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে নেতৃত্বে দিচ্ছে প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহর হাতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস (আরসা)।
জানা গেছে, ৫ টি ক্যাম্প একসাথে জড়ো হবে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯ এর ফুটবল মাঠে। সকাল ১০ টায় শুরু হবে সমাবেশ। সেখানে একসঙ্গে যোগ দেবে ক্যাম্প ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নাম্বারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
তবে বাকি ক্যাম্পগুলোর রোহিঙ্গারা ওই সমাবেশে যোগ দেবেন নাকি পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করবেন সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রোহিঙ্গারা যে ১৯ দফা দাবি নিয়ে কাল ১৯-শে জুন ‘গো হোম ক্যাম্পেইন’ নামের সমাবেশ করবেন।
০১। অন্য জাতিসত্তার মতোই আমাদের মূল অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে।
০২। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই রোহিঙ্গা বলতে হবে।
০৩। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে হতে হবে।
০৪। মায়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পের সময় হতে হবে সীমিত।
০৫। প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে।
০৬। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের গ্রামে প্রত্যাবাসন করতে হবে।
০৭। প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রতিটি MOU অবশ্যই করতে হবে।
০৮। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই জড়িত থাকতে হবে US, LIN, OIC, NGO, UK, EU, বাংলাদেশ, ASEAN, ইত্যাদি পক্ষ।
০৯। রোহিঙ্গাদের আগে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য R2P কে আরাকানে উঠতে দিতে হবে।
১০। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পুনর্বাসিত করতে হবে।
১১। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করা যাবে না।
১২। কোনো কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা উচিত হবে না।
১৩। আরাকানের আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে যেকোন জায়গায় স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।
১৪। 1982 সালের নাগরিক আইন বাতিল হতে হবে।
১৫। যতটা সম্ভব কারণ হিসেবে প্রত্যাবাসনের আগে আরাকানে আইডিপি ক্যাম্প বাতিল করতে হবে।
১৬। রোহিঙ্গাদের জন্য জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
১৭। রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে।
১৮। জমির চিংড়ি পুকুর থেকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং চারণভূমি ফেরত দিতে হবে রোহিঙ্গাদের কাছে।
১৯। আমরা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার শিকারসহ ইত্যাদি দাবী উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকের রোহিঙ্গাদের সমাবেশের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিনা সেটি জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে।
আইকন নিউজটুডে /১৯০৬২০২২/আর