(প্রথম পর্ব)
এম আর আয়াজ রবি।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য বেড়ে চলেছে। সম্পদ আহরণ ও অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে মানুষে মানুষে অসমতা মানবসভ্যতার এক চিরায়ত সমস্যা।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে মানুষে মানুষে অসমতাও বেড়ে গেছে বহুদুর। যদি সেই অসমতা হয় বৈধতা ও অবৈধতার প্রশ্নে, তাহলে নিশ্চয়ই অবৈধতার অসমতাকে লাগাম ঠেনে ধরতে হবে শক্ত হাতে, বৈকি!
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে মায়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায়, উখিয়া- টেকনাফ বর্তমানে ইয়াবা কারবারীর নিরাপদ জোন ও ট্রান্সজিট পয়েন্ট এবং রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে দেশে ও সারাবিশ্বে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত! ইয়াবা ছোট একটি ট্যাবলেটের নাম। ইয়াবার মূল শব্দ থাই থেকে উৎপত্তি। সংক্ষিপ্ত অর্থ পাগলা ঔষধ। ইয়াবা সেবন একটি মারাত্মক নেশা ! এটি একটি আবদ্ধ চক্রও বটে ! এটির এত ভয়ানক ক্ষমতা-যে কোন মানুষ, পরিবার, সমাজ, দেশ এবং জাতি ধ্বংস করে দিতে পারে নিমিষেই। এটম বোমার চেয়েও বেশী শক্তিশালী এই মরণ নেশা ইয়াবার আগ্রাসন !
সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা রাতারাতি আংগুল ফুলে কলাগাছ থেকে বটগাছে পরিণত হয়েছে , যারা এই অল্প কিছু দিন আগেও দিনে এনে দিনে খেতে পারতনা! এমন অনেক তথাকথিত কোটিপতি চোখে পড়ে, যারা বন থেকে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতো, রিক্সা চালাতো, কিংবা বিভিন্ন বাড়িতে রাখাল বা দিনমজুরের কাজ করতো! তাদের অধিকাংশের পড়ালেখার বালাই নেই, অনেকে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের ধারে কাছে যাবার ও সুযোগ হয়নি! আবার অনেকেই আছে প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেনি! আর কিছু আছে আন্ডার মেট্রিক!
একসময় তারা খুব কষ্টে কালাতিপাত করতো, যা সাধারন মানুষের চোখের দেখা। আজ তারা কিভাবে, এত অল্প সময়ে, কোন আলাউদ্দিনের চেরাগের হদিস পেয়েছে যে, রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেল? সমাজ সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন সেই চেরাগ বা সোনার চামচ আসলেই কি যার বদৌলতে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন!
বছর কয়েক ধরে ইয়াবা যেভাবে মহামারী রূপ নিয়েছে তাতে বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশী অভিযানের পাশাপাশি ইয়াবার কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা প্রতিরোধ করা না গেলে তরুণ প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। সুদুর প্রসারী দেশের যে পরিমান ক্ষতি সাধিত হবে তা টাকার বা সম্পদের অংজে পরিমাপ করা সম্ভব হবে না। আজ যারা ইয়াবাসেবী, তাদের একটি নির্দিষ্ট অংশকে ইয়াবা সেবনের টোপ দিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এ মরণঘাতী নেশা। তারাই পরবর্তীতে বিক্রেতা বা সোর্স হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হয়ে। ইয়াবা সিন্ডিকেট খুবই দুর্ধর্ষ, খুবই শক্তিশালী। এই চেয়ে ক্র ভেদ করা কঠিন হলেও অসাধ্য নয়। দেশের আইন৷ শৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স গুলো নিশ্চয়ই জানেন কারা কারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের কাছে একাধিক অথেনটিক লিস্ট আছে। কারা কারা নতুন পুরাতন ইয়াবা সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত তাদের কাছে জানা থাকার কথা। আমরা চাই সীমান্ত এলাকা মাদক, ইয়াবাশুন্য পরিবেশ। উক্ত পরিবেশ বিনির্মাণে প্রশাসন, আইন শৃংখলা বাহিনী, বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সাথে সাধারন জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। ইয়াবা নির্মুলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত করতে হবে।
সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারন জনগন মারাত্মক হীনমন্যতায় দিনাতিপাত করছেন। কারন,বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে উপার্জনকারীদের টাকার গরমে যারা সৎ পথে, বৈধ উপায়ে, কষ্ট করে উপার্জন করছে তাদেরকে মানুষ নয় একটা ক্ষুদ্র পিঁপড়া হিসেবেও গন্য করছেন না! সমাজে তথাকথিত ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ এসব অপাংত্তেয় লোকদের ক্ষমতার এতই দাপট সবখানে তিলকে তাল করে- টাকা ও ক্ষমতার গরম দেখায়! কথায় কথায় বিভিন্ন বিষয়ে হুমকি,ধামকি, থানা পুলিশের ভয় দেখায়!সাধারন জনগনের মনে প্রশ্ন জাগে- এসব উচ্ছ্রিষ্ট নর্দমার কীটরা সমাজে এত স্পর্ধা দেখাবার সাহস কেমনে পায়? কি তাদের আত্ম পরিচয়?
কিছু জনপ্রতিনিধি নামধারী সমাজ সেবার নামে সমাজ শোষক তাদেরকে পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছে বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে! তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন। আমরা চাইব এসব চুনিপুঁটির সাথে যেসব রুই, কাতলা ও রাঘব বোয়ালরা বিভিন্নভাবে জড়িত, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। নচেৎ কিছু কিছু লোক অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা পয়সার গরম, আত্মগৌরব ও বিভিন্ন বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারনে সমাজ ব্যবস্থার উপর শ্রেণি বৈষম্য ও আয় বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে অন্যায়কারীরা, সংখ্যাগরিষ্ট সাধারন মানুষের উপর জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে বসবে।
প্রশাসন ও সরকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি উদাত্ত আহবান থাকবে, দয়াকরে এসব ইয়াবাব্যবসায়ী, অবৈধভাবে উপার্জনকারী, হারাম খোর, দেশদ্রোহী ও মানবতাবাদী অপরাধী চক্রকে অতিসত্তর এরেস্ট করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। নচেৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মাদক ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অংকুরে বিনষ্ট হতে বাধ্য। ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখকঃ কলামিষ্ট ও মানবাধিকার কর্মী।