ঢাকাশুক্রবার , ৬ জানুয়ারি ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কক্সবাজারের উখিয়ায় বরবটিতে মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার পুঁজি বিনষ্ট- প্রান্তিক কৃষকের মাথায় হাত

admin
জানুয়ারি ৬, ২০২৩ ৯:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আইকন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

উৎপাদিত বরবটি

কক্সবাজারের উখিয়ায় বিভিন্ন এলাকায় শীতকালীন সবজি বরবটি চাষে কৃষকরা খুবই আগ্রহী হবার কারনে বারবার বরবটি চাষ করে আসছে। কারণ বিগত বছর গুলোতে বাজারে ব্যবহ্রত ইউনাইটেড সীডস গ্রুপের বীজ ‘ইউনাইটেড-৫৮’ জাতের বীজটি খুবই উর্বর, ফলনশীল ও প্রান্তিক কৃষকের চাহিদার প্রতিফলন ঘটেছিল বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। কোম্পানীসুত্রে জানা গেছে, এ বীজের বিশেষত্ব হচ্ছে- এটি উন্নত মানের বরবটি উৎপন্ন করে। মিডিয়াম সবুজ বরবটি ২০-২২ ইঞ্চি লম্বা হয়,কোমল মাংস বেশি। ভাইরাস প্রতিরোধী ও ভাইরাস রোগ মুক্ত।

বরবটিতে একপ্রকার ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়, এটিকে বরবটির মোজাইক রোগ বলে। এটি হলে গাছে হলুদ ও গাঢ় সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক করা পাতা দেখা দেয়। এটি কান্ড ও পাতায় বেশি আক্রমন করে। জাব পোকা এ রোগের বাহক বলে জানা গেছে।

প্রান্তিক কৃষকরা জানান, বিগত বছরে বরবটি চাষে খুব ভাল ফলন হবার কারণে তারা সবজি উৎপাদন করে মোটামুটি লাভবান হয়েছিল। তাদের অবস্থা দেখে অন্যান্য প্রান্তিক কৃষকরা অনুপ্রানিত হয়ে আরও অনেকেই সেই ইউনাইটেড-৫৮ বীজটি ক্রয় করে তাদের নিজের জমি অথবা বর্গা জমিতে লাগিয়ে ভাল ফলের আশা করেছিল।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বরবটিতে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে তাদের সেই আশায় গোড়ে বালি হয়ে, প্রান্তিক কৃষকদের মাথায় হাত দেবার উপক্রম হয়েছে। অত্র প্রতিবেদক সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেন, উখিয়া উপজেলার রত্না পালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া থিমছড়ি নামক স্থানে প্রায় ১০ জন প্রান্তিক কৃষক ৫ একর জমিতে ইউনাইটেড সীডস গ্রুপের ইউনাইটেড-৫৮ জাতের বীজ বপন করেন। তারা প্রতি কৌটা বীজ ২২০ টাকা করে বিভিন্ন বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্টান থেকে ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত বীজগুলো প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বপন করেন। কিন্ত বীজ বপনের পরে যথারীতি পরিচর্যা করে বীজগুলো চারা গাছে পরিনত হবার পরেও তেমন কোন ফলন দেখা যাচ্ছিলনা। যে কয়েকটা বরবটি ফলন হয়েছিল তার মধ্যে কোনটা ছোট, কোনটা বড় অথবা কোনটা স্বল্প দৈর্ঘ্য কোনটা অপেক্ষাকৃত লম্বা। আবার কোনটা সাদাটে অনুর্বর। যা খাওয়া ও বাজারে বিক্রয়ের অনুপযুক্ত। আবার গাছের পাতাগুলো হলুদে ও সাদা হয়ে পড়ছে। অনেকে প্রত্যাশিত ফলন না পেয়ে খুব মন খারাপ করে আছে। কারণ তারা অনেকেই গোলার ধান, গরু ছাগল বিক্রি করে, ধার কর্জ করে শীতকালীন আগাম বরবটি চাষ করে দু’টাকা বেশি লাভ করার প্রেরণা থেকেই এই ইউনাইটেড সীডস গ্রুপের ‘ ইউনাইটেড-৫৮ জাতের বীজ বপন করেছিল।

ভোক্তভুগী কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন-‘ প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও অনেক আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে প্রায় ৩০ শতক জমিতে ইউনাইটেড-৫৮ জাতের বরবটির চাষ করি। গোলার ধান বিক্রি করে বীজ ক্রয় করে বরবটির চাষ করি। সাথে সার, কীটনাশক, পানি সেচে খরচ হয়ে যায় অনেক টাকা। আবার শ্রমিক নিয়োগ করে ফলন ফলাতে গিয়েও অনেক টাকা খরচ হয়ে পড়ে। সাথে নিজের অপরিসীম পরিশ্রমের ফসলের প্রত্যাশা ছিল বরবটির ভাল ফলন। কিন্তু বীজ থেকে গাছে পরিনত হবার পরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বরবটির ফলনের পরিমান,ফুল ফলের আকার আকৃতি, গাছের শারীরিক সক্ষমতা খুবই নেতিবাচক। এমতাবস্থায় আমিসহ অন্যান্য যারা এই ইউনাইটেড-৫৮ জাতের বীজ এখানে বপন করেছি প্রায় প্রত্যেকের অবস্থা একই রকম। এখন আমরা বরবটি ক্ষেত, বীজ, সার, কীটনাশকসহ শ্রমিক খরচ, নিজের পরিশ্রমের কারনে যে বিশাল খরচ হয়েছে, তা পুষিয়ে উঠা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমরা গরীব মানুষ, সামান্য ক্ষেত খামার করে, তরিতরকারি উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ করে সন্তান সন্তুতি, মাবাবা, স্ত্রী পরিজন নিয়ে বেচে থাকি। এখন ক্ষেতের অবস্থা দেখে দু’চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। আমরা বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমন বাজে বীজের কারণে আমাদের ক্ষেতের ফলন নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেতে আমাদের যথাযথ অনুদান বা সাহায্য সহযোগিতা আশা করছি। না হয় আমরা পুরো পরিবার না খেয়ে সামনে দিন অতিবাহিত করতে হবে।‘

তাছাড়া স্থানীয় প্রান্তিক কৃষক মোঃ শফিকুল আলম, নুরুল আবছার , আব্দুল মাজেদ , ইউসুফ , ফজলুল হকসহ আরো অনেকের প্রায় ৫ একরের মত ক্ষেত ধ্বংসের মূখে। তারা সবাই কৃষি মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে কেন তাদের মাথায় হাত পড়েছে যাছাই বাছাই করে যেখানেই( বীজ সরবরাহকারী কোম্পানী, ডিলার বা অন্যান্য) গাফিলতি থাকুক না কেন চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আবেদন জানাচ্ছে। তাছাড়া উপজেলার থাইংখালী, পালংখালী, কুতু পালং, মরিচ্যা, জালিয়া পালং এর অবস্থাও একই রকম বলে জানা গেছে।

ইউনাইটেড সীডস কোম্পানীর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্তা ব্যক্তি মো; হায়দার সাহেবের সাথে মুঠো ফোনে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করলে, তিনি উখিয়া এসে অত্র প্রতিবেদকের সাথে দেখা করেন। সাক্ষাতে বিভাগীয় কর্তা হায়দার সাহেব বলেন, ‘ বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় ৭ টনের মত ইউনাইটেড সীডস কোম্পানীর ইউনাইটেড-৫৮ জাতের বরবটির বীজ বিক্রয় হয়েছে। তারমধ্যে উখিয়া টেকনাফে খুবই স্বল্প পরিমান অর্থাৎ ৩শ থেকে ৪শত কেজি এই কোম্পানীর বীজ বিক্রয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ দেননি, কিন্তু হঠাত করে উখিয়ার কিছু এলাকায় এমন অভিযোগ আমাদের রীতিমতো হতবাক করেছে। ছবি দেখে এটি স্পষ্টত মনে হচ্ছে বরবটিতে ভাইরাসে আক্রমন করেছে। মোজাইক রোগের নেতিবাচকতা হচ্ছে এটি যে গাছে ছড়াবে তা আশে পাশের অনেক গাছকে আক্রমন করবে। এই রোগের কোন প্রতিষেধক বা ঔষধ এখনো বাজারে আসেনি। এ রোগ হলে গাছকে তুলে ফেলতে হয়-যাতে আক্রান্ত গাছ অন্য ভালো গাছের সংস্পর্শে আসতে না পারে’।

উখিয়ার বিছমিল্লাহ বীজ ভাণ্ডারের কর্ণধার শফি সওদাগর বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ বছর বিভিন্ন বীজ, কীটনাশকসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পন্য বিক্রয় করে আসছি। কিন্তু এরুপ অবস্থার সম্মুখীন হয়নি। ইউনাটেড-৫৮ জাতের বরবরটির জাতটি সবচেয়ে ভাল ও উন্নত মানের। এই বীজ থেকে এরুপ ফলন আমরা কোনদিন আশা করিনি। কিন্তু কেন, কি কারণে এরুপ হচ্ছে ইউনাইটেড সীডস কোম্পানী ও কৃষি দপ্তর ভালো জানবেন কিন্তু এখানে আমার করার কিছু নেই।
উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল রানা বলেন,’ কৃষকরা তাদের সমাস্যার কথা বর্ননা করে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করব। আর তাদের ক্ষতিপুরনের ব্যাপারটিও আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে পাওয়া গেলে আমরা নিশ্চয়ই তা করব।‘ তিনি আরো বলেন,-‘বরবটির ভাইরাসটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি প্রতিকুল পরিবেশে সুপ্ত অবস্থায় বেচে থাকে। যখনই অনুকুল পরিবেশ পাবে তা আবার মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। অনেক সময় বীজের মধ্যেও এই ভাইরাস লুক্কায়িত থাকে। বীজ থেকেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে তা কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। অনেক সময় মাটির উর্বরতা হ্রাসের কারনে অথবা একই জমিতে বারবার একই ফসল/ফলন আবাদ করলে এই রোগ হতে পারে’।

এমনিতে বাংলার অধিকাংশ কৃষক অশিক্ষিত, আধুনিকতার তেমন জ্ঞান নেই। তারা মনে প্রাণে আস্থা ও বিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে, নিজের বা বর্গাজমিতে চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে দু বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করেন। তার উপরে বীজ সরবরাহকারী কোম্পানী বা বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্টানের গাফিলতি বা কোন ধরনের অনৈতিকতার কারনে এমন ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হয়ে থাকলে তা রীতিমতো দুঃখজনক। উপরোক্ত বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন উখিয়ার হত দরিদ্র, প্রান্তিক কৃষকরা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।