আইকন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মানবতার শহর উখিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা৷ স্থানীয় প্রায় ৪ লক্ষ জনসাধারণের সাথে যুক্ত হয়েছে আরো প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করার জন্য নিয়োজিত রয়েছে আরো অর্ধ লক্ষ সেবা প্রদানকারী লোক। সব মিলিয়ে উখিয়া টেকনাফের আকাশে প্রায় ৭ লক্ষ হাজার টন কার্বনডাইঅক্সাইড ভাসমান রয়েছে বলে এক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে।
এতদঞ্চলে যে পরিমান জনসংখ্যার বাস, সেই অনুপাতে পরিবহনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে যেমন বাড়েনি, তেমনি এই খাতের উল্লেখযোগ্য তেমন পরিবর্তনও হয়নি। তবে দুরপাল্লার গাড়িতে বিলাসবহুল এসি বাস, স্লিপার, ডাবল ডেকার বাসসহ নতুন নতুন গাড়ির সংযুক্তি ঘটলেও আন্তঃউপজেলা বা জেলা শহরের সাথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কোনপ্রকার ভাল সার্ভিস সম্বলিত বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা নেই বললেও চলে ৷
উখিয়ার সাধারণ মানুষ নিতান্ত অসহায় ও কিছু কুট কৌশলী চক্রের আবর্তে জর্জরিত। বলা যায় সিন্ডিকেট ও মাফিয়া চক্রের হাতে একপ্রকার বন্দী।
উখিয়া থেকে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য মিনিবাস-সী লাইন, কক্সলাইন, পালং সার্ভিসসহ অনেক ধরনের সার্ভিস রয়েছে। এই মিনিবাস সার্ভিসগুলো যে কত ধরনের জোচ্চুরি, প্রতারণা, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সে ব্যাপারে কেহ মুখ খোলার অবকাশ নেই। অনেকেই মনে করেন, এই জগৎকে একটি জগদ্দল সিন্ডিকেট চক্র আষ্টেপৃষ্টে আবদ্ধ করে রেখেছে অনেকদিন যাবৎ। যথাযথ কর্তৃপক্ষও কোন অজানা কারণে এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন!
প্রশাসনের উচিত হবে জ্বালানি তেলের নতুন বর্ধিত মুল্যের আলোকে, সুক্ষ্ম তদারকি ও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ কল্পে ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ করে গাড়িতে যাতে প্রশাসনের ঘোষিত ন্যায্য ভাড়ার চার্ট সংরক্ষন করার ব্যবস্থা করা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাড়া নিয়ে আগের মতোই স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। প্রতিটি গাড়িতে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও কোনো গাড়িতে এখন আর তালিকা নেই। চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকার নিয়মও কেউ মানে না। যাত্রী পেলে মাঝপথেও বাস দাঁড়াতে দ্বিধা করে না। আবার যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানো নামানো হয়। বিরতিহীন সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও কার্যত সব বাসই বিরতি দিয়েই চলে। ‘সিটিং’ বা প্রতি সিটের অনুপাতে যাত্রী নেবার নামে ‘চিটিং’ প্রবনতার কাছেও জিম্মি যাত্রীরা। সব মিলে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে।
অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে,ছোট মিনিবাসগুলোতে উভয় পাশে প্রতিটি সীটে দু’জন করে প্যাসেঞ্জার বসেন। সিটে বসার জায়গাগুলো এতই ছোট ও সংকীর্ণ যে, একজন পূর্ণ বয়স্ক লোক সিটে বসে উনার হাটুকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখার কোন উপায় নেই। পাশাপাশি বসতে গিয়ে একজনের হাটু সিটের ভিতরে থাকলেও অন্যজনকে হাটু বাইরে রেখে বসতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে দাঁড়িয়ে থাকা প্যাসেঞ্জারের সাথে সীটে বসা প্যাসেঞ্জারের টার্স বা সংযোগ লেগেই থাকে। যদি মহিলা প্যাসেঞ্জার হয় তাহলে তো বলাই বাহুল্য! বিড়ম্বনার শেষ থাকে না যেন! এই ছোট বাসে ২৫ জন প্যাসেঞ্জার সিটে বসেন, দাঁড়িয়ে থাকেন আরো প্রায় ডজন খানেক, কল্পনা করতে পারবেন? যে মিনিবাস ১৮ থেকে ২০ বসার অবস্থায় নেই, সেখানে সব মিলিয়ে ৩৫/৩৬ জনের বহর নিয়ে কক্সবাজার শহরে যাতায়াতের কথা বলে টাকা নিলেও গাড়িগুলো কিন্তু কক্সবাজার প্রবেশ মুখের টার্মিনালের পরে যাবার সুযোগ নেই।
উখিয়া থেকে বাস টার্মিনালের দুরত্ব প্রায় ২২ কিঃ মিটার। বর্তমান বর্ধিত জ্বালানী তেলের মুল্যে প্রতি কি;মিটার ২ টাকা ৩০ পয়সা করে মোট ভাড়া আসে ৫০ টাকা কিন্তু বাস কর্তৃপক্ষ ভাড়া নিচ্ছে কক্সবাজার শহরের অর্থাৎ পুরো ৩১ কিঃ মিটারের। সেখানেও আছে শুভংকরের ফাঁকি! বাস টার্মিনাল থেকে শহরের দুরত্ব আরো প্রায় ৮ কিঃমিটার। সাধারণ যাত্রীকে টার্মিনাল থেকে আবার ২০ টাকায় সিএনজি চড়ে শহরে যেতে হয়। আবার সিএনজি’র ভাড়া উখিয়া থেকে শহরের পানবাজার পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত জনপ্রতি ১০০ টাকা হলেও লিংক রোড থেকে উখিয়া পর্যন্তও ১০০ টাকার কমে একজন সিএনজি ড্রাইভারও কিন্তু কোন যাত্রীকে নেন না। প্রশাসনের নির্দিষ্ট কোন ভাড়ার তালিকা না থাকার কারনে ভাড়া নিয়ে হরহামেশা তর্ক-বিতর্ক হয়। অনেকক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রী নিরুপায় চুপচাপ থাকলেও আবার অনেকের সাথে হাতাহাতি মারামারিও যেন নিত্য দিনের ঘটনা।
সব মিলে উখিয়া থেকে কক্সবাজার শহরে যেতে একজন যাত্রীর ১০০ টাকা করে ২০০ টাকা নাই হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন যারা কক্সবাজার আসা যাওয়ার মাধ্যমে অফিস-আদালত, চাকুরী করেন তাদের কি অবস্থা হচ্ছে তা ভেবে দেখুন তো?
এখানে উল্লেখ্য যে, গত বছরের আগষ্ট (৬ আগস্ট, ২০২২ তারিখ) থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা আর অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৫ টাকা। আমরা ন্যায্য ভাড়ার পক্ষে কিন্তু যাত্রী সাধারনকে এক প্রকার জিম্মি করে, লক্কর জক্কর মার্কা, ধ্বজভঙ্গ ও ছোট পরিসরের বাসগুলোতে কোমরে যেমন ব্যথা পাচ্ছে, তেমনি হাঁটু বেঁকে গিয়ে শেষ বয়সে দীর্ঘকাল কষ্টের কারণ হবে তাতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই।
মানবতার শহর উখিয়ায় ভালো মানের বাস সার্ভিস না থাকার কারণ কি? ভালো মানের বাস সার্ভিস বেসরকারি-ব্যক্তি বা সংগঠন পর্যায়ে উখিয়া কক্সবাজার লাইনে সংযোজন করার উদ্দ্যোক্তা শ্রেণি পাওয়া না গেলেও সরকারি উদ্দ্যোগেও ভালো মানের গাড়ির ব্যবস্থা করা যায় এবং তা করার কোন সীমাবদ্ধতা আছে বলে আমার জানা নেই। ( অনেকেই মনে করছেন, সিন্ডিকেট ও মাফিয়া চক্র উখিয়ায় ভালো মানের বাস সার্ভিস উদ্দোক্তা শ্রেণিকে আসতে দিচ্ছে না, কথাটি ধর্তব্যে নেওয়ার সময় এসেছে)।
চট্টগ্রাম শহরের সাথে পটিয়া, বাঁশখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া থেকে বিআরটিসি’র বাস সার্ভিস দিতে পারলে, উখিয়া টেকনাফ থেকে বিআরটিসির বাস সংযোজনের সমাস্যা কোথায়?আমরা কেন এতো পিছিয়ে রইলাম? আমাদের সমাস্যাটা আসলে কোথায়? ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
ধন্যবাদ সবাইকে।

