।। এম আর আয়াজ রবি ।।
অনেকের কাছে সাংবাদিকতা যতোটা না পেশা তার চেয়ে অনেক বেশি নেশা, ভালোলাগা ও ভালোবাসার একটি নির্ভরযোগ্য স্থান বা মাধ্যম। এই নেশা ও ভালোবাসাটা হচ্ছে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার নেশা বা বাধ্যবাধকতা। আমার মনে হয়, একজন ডক্টর তার মানব সেবা পেশায় যেভাবে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন একজন পেশাদার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ সম্পন্ন সাংবাদিক তার চেয়ে বেশি মানুষের কল্যাণ করার সুযোগ রয়েছে। একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, যাকে জাতি গড়ার কারিগর বলা হয় তিনি যেমন জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন, তেমনি একজন পেশাগত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক জাতি গঠন ও জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে বাধ্য করতে পারেন। তবে, কোন সাংবাদিকের এই নেশা কেটে গেলে তিনি তখন যতোটা না সাংবাদিক, তার চেয়ে বেশি চাকুরিজীবী!
তাই বলা যায়, সাংবাদিকতা হচ্ছে সেবামূলক একটি পেশা। আদতে সাংবাদিকতা একটি ব্যতিক্রমধর্মী পেশা, যা অনেকটা কষ্টসাধ্য, চ্যালেঞ্জিং, বুদ্ধিদীপ্ত, নৈতিক দায়যুক্ত,সত্য অনুসন্ধ্যানে প্রাপ্ত সংবাদ কারও পক্ষে-বিপক্ষে গেলেও, পেশাদার সাংবাদিককে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ/সত্যের পক্ষ ও জবাবদিহীমুলক কার্যকলাপ সম্পন্ন করতে হয় বিধায় এ পেশাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় অন্য সব পেশার চেয়ে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির।
দুনিয়ার তাবৎ সমাজ ও অস্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় দায়িত্ব পালনও করতে হয় বিচক্ষণতার সাথে।ঘটনার অন্তরালের আসল ঘটনা বুঝা, আত্মস্থ করা, তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করা, যাছাই বাছাই ও সঠিকভাবে বিন্যস্ত করা খুবই কঠিন কাজ। গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা,ফোরকাস্টিং পাওয়ার, আধাত্মিক জ্ঞান, ধৈর্য, ধী- শক্তি, পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে সমঝে চলার ক্ষমতা, দেশের প্রচলিত আইনের জ্ঞান, সংবিধানের ধারা, উপধারা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ বিষয়ে জানা, বুঝা ও উপলব্ধি করার জ্ঞান, প্রতিভা বা মেধা না থাকলে প্রকৃত সাংবাদিক যেমন হওয়া যায় না, তেমনিভাবে সমাজ বা রাষ্ট্রও তাদের দ্বারা উপকৃত হতে পারেনা।
উন্নয়নশীল দুনিয়ায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যতার কারণে সমাজ ও রাজনীতি অস্থিতিশীল থাকায় দুর্নীতি শক্ত শেকড়ে বিশাল বটবৃক্ষের ন্যায় ক্রমশ: বিস্তৃত হওয়ায় সৎ, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিপরীতে পেশীশক্তিধারী অপসাংবাদিকদের দাপট-দৌরাত্ম্য এখন উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা বাংলাদেশে এখন অপ্রতিরোধ্য!
হলুদ সাংবাদিকতার জন্য দায়ী মূলতঃ এক শ্রেণীর সাংবাদিক ও সংবাদপত্র। তবে এর সাথে রয়েছে দেশ ও সমাজের সার্বিক অবক্ষয় । এদের কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংবাদিক মাত্রই সাধারণ মানুষের কাছে পরিণত হয়েছে এক ভীতিকর প্রাণীতে। মানুষ সাংবাদিক দেখলেই ‘সাংঘাতিক’ বলে আঁৎকে উঠে। কারণ হচ্ছে লেখার স্বাধীনতার সুবাদে এরা সাংবাদিকতার ন্যূনতম বিধি-বিধান আর নীতি-জ্ঞানকে তোয়াক্কা না করে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে- এ কেমন সাংবাদিকতা? সত্যকে গোপন করে মিথ্যাকে ফুলিয়ে রং লাগিয়ে প্রচার করাটা সাংবাদিকতার কোন স্তরে পড়ে? সংবাদ পরিবেশনায় তিলকে তাল বানানোর কেরামতি অবশ্যই সচেতন পাঠক সমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে এটা স্বাভাবিক । অনেক সময় সাংবাদিকতার লেবাস পরে অনেকে কত যে নীচতা, হীনতা, দীনতা আর সংকীর্ণতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত তা বলতেও ব্যক্তিত্বে লাগে! একজন সাংবাদিক যদি এটা ভাবেন আমি সাংবাদিক, আমার হাতে কলম আছে, কাগজ আছে, তাই যা খুশি লিখবো, সবার মাথা আমি কিনে নিয়েছি- এটা ভাবা কেমন হয়? লেখার স্বাধীনতা মানে অন্যের অধিকার, সামাজিক অবস্থান, মান-সম্মানকে উপেক্ষা করা নয়। সংবাদপত্রের যেই স্বাধীনতা মানুষের সকল স্বার্থের পাহারাদার, তার সকল অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানকারী এবং অসহায়ের শেষ কন্ঠ, সেই পবিত্র স্বাধীনতাকে আজ ‘ভেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার’ মতো মর্মান্তিক ভূমিকার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা রাজনৈতিক দলের ওপর অসত্য তথ্য আরোপ করা হচ্ছে। ফলে অনেকে সামাজিক রাজনৈতিক বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে তা সংবাদপত্রগুলো অনেকক্ষেত্রে প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছে না।
অনেকে বলছেন, সাংবাদিক কিংবা সংবাদপত্রের মালিকরা সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা রয়েছে, সে সুযোগের অপব্যবহার করছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের সংবাদপত্র সম্পর্কে, মানুষের বিশ্বাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে, তলানীতে ঠেকছে। যে সব সাংবাদপত্র এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট কিংবা উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশন করে তারা প্রচলিত আইন-কানুন, সংবিধান তথা সমগ্র দেশ ও জাতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলছেন।
এই ধরনের সাংবাদিকদের রাজনৈতিক স্বার্থান্ধতা ও অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে সাংবাদিকতার মত এ মহান পেশাও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়টি সংবাদপত্র জগতের কর্ণধারদের জন্য এক অশনি সংকেতও বটে।
বর্তমানে ভুঁইফোড়, অপসাংবাদিকতাই বেশি চোখে পড়ে। যারা সাংবাদিকতা বিষয়ে তেমন কিছু জানেনা, সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য, গুনাবলী, নীতি-নৈতিকতা,নিয়ম-কানুন তেমন কিছুই জানেনা বা বুঝে না আবার সংবাদ লেখার তেমন কোন যোগ্যতা নেই অথচ তারাই আজ সাংবাদিকতার তকমা নিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। অপসাংবাদিকরাই আজ বেশি ঐক্যবদ্ধ-তারাই সবখানে তিলকে তাল করতে সিদ্ধহস্ত। জাতীয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদ স্যারের ভাষায় সমাজের খারাপ মানুষগুলোই বেশি ঐক্যবদ্ধ। তাদের একজনে হুক্কা হুয়া বললেই অন্য সবাই হুক্কাহুয়া বলে উঠে। কিন্তু সমাজের ভালো মানুষগুলো একা, বিচ্ছিন্ন-তাই তারা কোনপ্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা শাণিত করতে পারে না!
আমরা দেখতে পাই, সম্পাদনা করার মেধা ও যোগ্যতা নেই অথচ সম্পাদক। দু’লাইন / দু’কলম শুদ্ধ বাংলা বলতে ও লিখতে পারেনা অথচ তারা রিপোর্টার, বড় বড় পত্রিকার প্রতিনিধি, নীতি নির্ধারক, হর্তাকর্তা! যে বা যারা জানেনা কোনটা সংবাদ, কোনটা সংবাদ না, বা একটা প্রতিবেদন কিভাবে লিখতে হয় তার কোন জ্ঞান নেই সে হয়ে যায় মস্তবড় প্রতিবেদক, কলামিষ্ট ও লেখক ! এ হচ্ছে সংবাদপত্র জগতের একটি ভয়ংকর চিত্র। এগুলো থেকে অপসাংবাদিকতা বিস্তার লাভ করেছে চারদিকে। আর এই অপসাংবাদিকতার বিকৃত আরেকটি প্রচলিত শব্দ হচ্ছে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’।অপ-সাংবাদিকদের নেই কোন বেসিক শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা, নেই কোন নীতি-নৈতিকতা, দায়িত্ব-জ্ঞান,সামাজিক দায়বদ্ধতা। তাদের কাছে নেই কোন প্রকার দেশপ্রেম, মাটি ও মানুষের প্রতি জবাবদিহীতা।
এক কলামিস্ট লিখেছেন, ‘কিছু সাংবাদিক গলায় কার্ড ঝুলিয়ে নিজেদের সাংবাদিক দাবি করে বিভিন্ন এলাকায় সো ডাউন দেয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে কোথাও কোন অন্যায়, অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে কিনা! হলেই মোবাইলে কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে নিজেদের আইডি থেকে ছোট্ট করে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে অমুক জায়গায় এমন কিছু হতে যাচ্ছে বিস্তারিত আসছে…আকার ইংগিতে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে বুঝানো। তারপর উনি বুঝে তাদের ফোন দিবে আর ফোন করতে দেরি হলে সেই সাংবাদিক তাকে ফোন দিয়ে তাদেরকে কিছু খুশি করার কথা বলবে না হলে নিউজ করার হুমকি’। কথাটি সর্বাঙ্গে সত্য বলে প্রতিভাত হয়েছে আমার।
হলুদ সাংবাদিকতার জন্য দায়ী মূলতঃ এক শ্রেণির তথাকথিত সাংবাদিক ও সংবাদপত্র। সাথে রয়েছে দেশ, সমাজ ও মানুষের নৈতিকতার সার্বিক অবক্ষয় । তাদের কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংবাদিক মাত্রই সাধারণ মানুষের কাছে এক ভীতিকর প্রাণীতে পরিণত হয়েছে । মানুষ সাংবাদিক দেখলেই ‘সাংঘাতিক’ বলে আঁৎকে উঠে। কারণ হচ্ছে লেখার স্বাধীনতার সুবাদে এরা সাংবাদিকতার ন্যূনতম বিধি-বিধান আর নীতি-জ্ঞানকে তোয়াক্কা না করে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে- তবে এটা কেমন সাংবাদিকতা? সত্যকে গোপন করে মিথ্যাকে ফুলিয়ে রং লাগিয়ে প্রচার করাটা সাংবাদিকতার কোনও স্তরে পড়ে কি? সংবাদ পরিবেশনায় তিলকে তাল বানানোর কেরামতি অবশ্যই সচেতন পাঠক সমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে এটাই স্বাভাবিক । অনেক সময় সাংবাদিকতার লেবাস পড়ে অনেকে কত যে নীচতা, হীনতা, দীনতা আর সংকীর্ণতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত তা বলতেও লজ্জা হয়। একজন সাংবাদিক যদি এটা ভাবেন আমি সাংবাদিক, আমার হাতে কলম আছে, কাগজ আছে, তাই যা খুশি লিখবো, সবার মাথা আমি কিনে নিয়েছি এমন ভাবা ঠিক নয়। লেখার স্বাধীনতা মানে অন্যের অধিকার, সামাজিক অবস্থান, মান-সম্মানকে উপেক্ষা করা নয়। সংবাদপত্রের যেই স্বাধীনতা মানুষের সকল স্বার্থের পাহারাদার, তার সকল অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানকারী এবং অসহায়ের শেষ কন্ঠ, সেই পবিত্র স্বাধীনতাকে আজ ‘ভেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার’ মতো মর্মান্তিক ভূমিকার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা রাজনৈতিক দলের ওপর অসত্য তথ্য আরোপ করা হচ্ছে। ফলে অনেকে সামাজিক রাজনৈতিক বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে তা সংবাদপত্রগুলো অনেকক্ষেত্রে প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছে না।
বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিক্যাল ৩৯ এ বলা হয়েছে-“ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা”।
আর্টিক্যাল ৩৯ (১) এ রয়েছে-‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল’।
আবার আর্টিক্যাল ৩৯ (২) (ক) এ বলা হয়েছে-প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং আর্টিক্যাল ৩৯ (২) (খ) এ বলা হয়েছে-‘সংবাদ পত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল’।
তবে অনেক সচেতন মহল মনে করছেন,সাংবাদিক কিংবা সংবাদপত্রের মালিকরা সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা রয়েছে, সে সুযোগের অপব্যবহার করছেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সাংবাদিক ও দেশের সংবাদপত্র সম্পর্কে, মানুষের বিশ্বাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে! যে সব সাংবাদিক বা সংবাদপত্র এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট কিংবা উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশন করে তারা প্রচলিত আইন-কানুন, সংবিধান তথা সমগ্র দেশ ও জাতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলছেন।
এই ধরনের সাংবাদিকদের রাজনৈতিক স্বার্থান্ধতা ও অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে সাংবাদিকতার মত এ মহান পেশাও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এ বিষয়টি পেশাদার সাংবাদিক ও সংবাদপত্র জগতের কর্ণধারদের জন্য এক অশনি সংকেত বৈ কিছু নয়।
একটা কথা প্রচলিত আছে-কাকের মাংশ কাকে খায় না!কিন্তু সাংবাদিকতা জগতে এর ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম অবশ্যই বিদ্যমান!
আজকাল ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, প্রিন্টিং মিডিয়া বা অনলাইন মিডিয়াতেই এক সাংবাদিকের অপকর্মের কথা অন্য সাংবাদিক লিখে দিচ্ছেন, তুলে ধরছেন এবং তা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এটা এক সেন্সে খুবই ভালো দিক। সর্ব মহল থেকে সাংবাদিকদের অপকর্মের নিন্দাবাদ শুনতে হচ্ছে। মানুষ লাগামহীন সাংবাদিকদের প্রতি তিক্ত, বিরক্ত ও শংকিত। তথাপি এসব অপ-সাংবাদিকদের অপকর্মের দৌরাত্ম্য কী আসলেই কমছে? না কমেনি,বিভিন্ন লেজুড়ভিত্তির কারনে অপসাংবাদিকতা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
তাই এখন প্রয়োজন অপসাংবাদিকতার লাগাম টানার। সাংবাদিকদের রীতিমতো জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত। অধুনা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য কিছু (কালা) আইন-কানুন করা হয়েছে। তথাপি এগুলো যতটা নয় অপসাংবাদিকতা রুখতে, তার চেয়ে বেশি ভিন্নমতাবলম্বীদের রুখতে বলে সচেতন সমাজ মনে করেন!

ইদানীংকালে, অবশ্য সাংবাদিকদের জবাবদিহিতার কথা সচেতন মহল থেকে শোনা যাচ্ছে। মূলত:পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। জবাবদিহি করতে হচ্ছে জনতার আদালতে। তারপরও কথা থেকেই যায়, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকরা যেহেতু সমাজের দর্পন, জাতির বিবেক। অন্যকথায় বললে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। বর্তমান যথাযথ বিরোধী দলবিহীন সংসদে সংবাদ মাধ্যমগুলো, সাংবাদিকবৃন্দই বিরোধী দলের ভুমিকায় অবতীর্ণ। তাই মানুষ চায় পেশাদার সাংবাদিকবৃন্দ, জবাবদিহিমুলক সংবাদ মাধ্যমগুলোই সমাজের অন্যদের জন্যে উদাহরণ হয়ে থাকুক। আমজনতার চাওয়া ও পাওয়া হলো-সাংবাদিকরা, গনমাধ্যম গুলো স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে মানুষ ও রাষ্ট্রের সেবা করবে- অন্যায় করবে না, অন্যায়ের সাথে আপোষ করবেনা-অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ করবে, সমাজের বাস্তব অসংগতি, মাদক, ইয়াবা, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি, পরিবেশ বিপর্যয়, অনিয়ম, দূর্ণীতি, অন্যায়, অবিচার, গুম, খুন, নিপীড়ন, নির্যাতন, রাষ্ট্রদ্রোহীতার বিরুদ্ধে, স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে,প্রতিবাদ শাণিত করবে । তারা নিজেরা যেমন দুর্নীতি করবে না-সকল ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে,রুখে দাঁড়াবে। মানুষের চাওয়া পাওয়ার অসম অবস্থার কিছুটা হলেও লাঘব করতে হলে অপ সাংবাদিকতা বা হলুদে সাংবাদিকতার মুলোতপাঠন করে সাংবাদিকদের ‘অপকর্মের’ জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা যায় কিনা-তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। ভবিষ্যতের জন্যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে, যারা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে আসবে, তাদের জন্য দায়িত্বশীলতার একটা বিহিত করা একান্ত প্রয়োজন। ধন্যবাদ সবাইকে।
২৭/০২/২০২৩, রাত ১০.৪৫।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট-উপজেলা প্রেসক্লাব উখিয়া এবং প্রেসিডেন্ট – বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) উখিয়া উপজেলা।
