আইকন নিউজ ডেস্কঃ
কক্সবাজার শহরের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদীর তীরে দখলকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসনের অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। নদীটির তীরবর্তী ৬০০ হেক্টর প্যারাবন ধ্বংস করে একে একে চলছিলো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। ভূমি খেকোরা নদীর তীরে গজিয়ে উঠা প্যারাবন ধ্বংস করে গড়ে তুলেছেন শত শত স্থাপনা। যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে জানিয়েছেন বাপাসহ পরিবেশবাদী সংগঠন গুলো।
এ নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে মঙ্গলবার (২৮-ফেব্রুয়ারী ২০২৩) উচ্ছেদ অভিযানের মধ্য দিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সফলতার মুখ দেখতে চলেছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) উখিয়া উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক আয়াজ রবি বলেন-বাঁকখালী নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ ধরে রাখার জন্য বাপা কক্সবাজার আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। এ নদীর অধিকাংশ অংশ বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল এতদিন দখল করে ছিল। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে সেসব অবৈধ স্থাপনা অবমুক্ত করে বাঁকখালী নদীকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে আসছিল। এ লক্ষ্যে বাপা কক্সবাজার শাখা মানববন্ধন, জেলা প্রশাসকসহ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও স্বারকলিপি প্রদান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাঁকখালী নদীর দখলকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসনের অভিযান করা হয়েছে।

এ প্রক্রিয়ায় পরিবেশবাদী ও সাংবাদিকবৃন্দকে দুবৃত্তদের হামলা ও নাজেহালের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে তিনি আরো বলেন, এসব সন্ত্রাসী চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
কক্সবাজার হতে খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সংযোগ সেতু। সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের মহোৎসবে মেতে উঠে প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র। যদিও এখানে একটি নদী বন্দর করার ব্যপারে সরকারের প্রজ্ঞাপন রয়েছে। এর জন্য এ জমি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্ট রায় দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এরই প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে দখলকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন অভিজান শুরু করে। অভিযানে অংশ নেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা। এদিকে অভিজানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দুপুরে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের উপর হামলে পড়েন ভূমিখেকোরা। এতে ডিবিসি নিউজের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সহ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। হামলার শিকার সাংবাদিকরা জানান, উচ্ছেদ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে লাঠিসোটা নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালান দখলদার চেয়ারম্যান আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন যুবক। এ সময় ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী।
পরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার সময় চেয়ারম্যান আবদুল খালেককে পিস্তল হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেন উপস্থিত কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদক তোফায়েল আহমদ।
তিনি সংবাদ সংগ্রকালে সাংবাদিকদের উপর এমন বর্বর হামলার নিন্দা জানান।
অভিযানে নদীর তীরবর্তী এলাকায় সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলার ভেঙে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২ শতাধিক ভবন ও ঘর গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে এবং থাকবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী চেয়ারম্যান আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।