।। এম আর আয়াজ রবি।।
বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। এ দেশে লুকিয়ে আছে হাজারো অপরূপ সৌন্দর্য্যের তীর্থভুমি। চিরাচরিত এই অনিন্দ্য সুন্দন প্রাকৃতিক অপরুপ, আমরা খুব অল্পই অনুধাবন করতে পারি। প্রকৃতির এ অপরুপ সুধা পান ও সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আমরা ছুটে চলি দেশ হতে দেশান্তরে, মানসিক প্রশান্তির পাণে। কিন্তু আমাদের নিজেদেরই রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। রয়েছে হাজারো পর্যটন যায়গা, আছে হাজারো ইতিহাস মিশ্রিত সৌন্দর্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের লীলাভুমি বান্দরবান। উঁচুনিচু পথ, পাহাড়ি ঢালু আঁকাবাকা দৃষ্টি নন্দন পথ, পাহাড়ী পথ ভ্রমণে অনভ্যস্ত পর্যটকদের হঠাৎ ভয়ে জবুথবু ঝাকুনি দিলেও সময়ের ব্যবধানে চিন্তা-চেতনা-মণ- মননে শিহরণ করা অনিন্দ্য সুন্দর, রুপের পিরামিড, পাহাড়ের শরীর জুড়ে ঘন সবুজের মায়াবী সমারোহ, যেন এঁকেবেকে চলে গেছে গভীর থেকে গভীরতম হৃদয় গহীনে স্বাশত এক অনবদ্য মনের খোরাক। প্রকৃতির অপরুপ বৈচিত্র্যময় পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের ছোট্ট স্বর্গের এক টুকরো অপরুপ নিদর্শন হলো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাহাড়, সমতল, বনভুমির চাদরে আবৃত এক নৈসর্গিক আবেদন, যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনে দাগ কেটে রয় নিজেরই অজান্তে-তা হল নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৩০ কিমি, বান্দরবান জেলা শহর থেকে ১২০ কিমি, সৈকত নগরী কক্সবাজার থেকে ৩৫ কিমি দূরে এই দৃষ্টিনন্দন লেকটি অবস্থিত। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রানকেন্দ্র জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর পাদদেশ ঘেষে পাহাড়ি পথের উচু ঢালের নিচু ভুমিতে অবস্থিত উপবন লেক।
আমরা উখিয়া ও টেকনাফের এসএসসি-১৯৯২ ব্যাচের বন্ধুরা মিলে গত ১৫-মার্চ-২০২৩ তারিখে ‘উখিয়া টু নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক’ প্রমোদ ভ্রমণ ও পারিবারিক মিলন মেলা’ অনুষ্টান সম্পন্ন করেছি। যাত্রায় আমরা প্রায় ৭০ জনের বহর ছিলাম। মাত্র একঘন্টার পরিকল্পনায়, এক সপ্তাহের মধ্যে এত বড় এডভেঞ্চার সম্পন্ন করা আসলেই প্রানপ্রিয় বন্ধুদের ঐকান্তিক ইচ্ছা, প্রচেষ্টা, সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন, প্রমোদভ্রমণ উপকমিটির সকল সদস্যগনের নির্ঘুম কর্মব্যস্ততা, প্রচেষ্টা ও নিরলস সাধনার ফসল ছাড়া আর কিছু নয়। গত সপ্তাহ দেড়েক পুর্বে এক নাতিশীতোষ্ণ এক সন্ধ্যায়, উখিয়ায় সদ্য প্রতিষ্টিত কাশ্মীরি কিচেন চায়নীজ রেস্তোরেন্ট এ এক অনাড়ম্বর অনুষ্টানের মাধ্যমে আমরা আট দশেক বন্ধুর মিলন মেলায় আমাদের যাত্রার দিনক্ষন ঠিক করা হয়। উক্ত প্রমোদ ভ্রমণ প্রস্তুতি সভায় সার্বিক দিক নির্দেশনা দিয়ে কৃতাত্ত্ব করেছেন আমাদের প্রানের বন্ধু ৪ নং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মানীত সভাপতি জননেতা জাহাংগীর কবির চৌধুরী সাহেব। উনার উপস্থিতি ও সার্বিক পরিকল্পনা, দিকনির্দেশনা ও কর্ম পরিকল্পপনা প্রমোদ ভ্রমণ প্রস্তুতিকে আরোও বেগবান করেছে নিশ্চয়ই।
বিশেষ করে উখিয়া টেকনাফের মানুষ পাহাড়-বনানী ও সমুদ্রের তর্জন-গর্জন দেখে ও শুনে একপ্রকার তটস্থ। তাই এবার পাহাড়, বনানীর মাঝে এক প্রকার পাহাড়ী লেকের অনুসন্ধানে যাবার আকুতি থেকেই, সেই একই বৈঠকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেকে ভ্রমণে যাবার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তাই নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কাজী জাহাঙ্গীরকে প্রধান করে ৮ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন সাংবাদিক কাজী বাচ্চু, বন্ধু মাকসুদ, মাষ্টার নাসির, মাষ্টার রুপন, এডভোকেট রেজা, মাষ্টার হাকিম বাবুল ও মাষ্টার আশিষ। ঐদিকে টেকনাফের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে বন্ধু খলিল, সিদ্দিক ও শুক্কুরকে। উদ্দেশ্য, আহবায়কবৃন্দকে উখিয়ার ৫ ইউনিয় ও টেকনাফের দায়িত্ব অর্পণ করে সাড়াসি অভিযান পরিচালনা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের উক্ত মহতি উদ্দোগে সম্পৃক্ত করা। যেমনি উদ্যোগ তেমনি কাজ। প্রমোদ ভ্রমনের তারিখ ধার্য্য করা হয় ১৫-মার্চ-২০২৩। পিকনিক উপকমিটির নির্ঘুম দিন রাত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও চলছে নির্দিষ্ট দিনক্ষণের অপেক্ষা। যথারীতি নির্ধারিত দিন ও তারিখ ঘণিয়ে আসলে বন্ধুদের মাঝে লক্ষ্য করা গেছে বাধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, সীমাহীন আনন্দ ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে শাণিত করার এক মহা সন্ধিক্ষণ। খুব সকালে টেকনাফের বন্ধু ছিদ্দিক ফোন করে আমাকে জানান দেয়, তারা তৈরি নাইক্ষ্যংছড়ির দিকে রওয়ানা দেবার। এদিকে উখিয়ার বন্ধুরা পরিবার পরিজন নিয়ে উখিয়া মসজিদ মার্কেটের সামনে জড়ো হয়েছে। ফাকে কয়েকজন বন্ধুদের পৌছার অপেক্ষায় সবাই প্রহর গুনছে। টেকনাফের এসএসসি-৯২ ব্যাচের বন্ধুরা উখিয়া টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কোট বাজার হয়ে চলে গেছে তাদের নির্দিষ্ট বাহনে। আমরা উখিয়া থেকে রওয়ানা দিয়েছি দুটি বাস, একটি কার ও নোহা গাড়ি নিয়ে। সকাল সাড়ে ৯ টায় যথাসময়ে যাত্রা শুরু করলেও আমরা কোটবাজার ও মরিচ্যা থেকে আমাদের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদেরকে গাড়িতে তুলে নিই। অবশ্য অনেকের পরিবার জয়েন করলেও অনেকের পরিবার এই প্রোগ্রামে জয়েন করেননি। স্বভাবতই যারা পরিবার নিয়ে যাচ্ছে তারা চাইবে পরিবারের সাথে একই গাড়িতে অবস্থান করে মজাটাকে জীবন্ত করে রাখতে। তাই যথারীতি সবাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়িতে বসে পড়েছিল এবং যখনই কোট বাজার পৌছল, মাষ্টার হাকিম একপ্রকার জোর করেই তার বন্ধুদেরকে পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্যগাড়িতে তুলে নেয়-উদ্দ্যেশ্য যারা পরিবার নিয়ে যায়নি তাদের সাথে পরিবারের সাথে থাকা বন্ধুদের একাকার করে নেওয়া। টানাটানির এক পর্যায়ে বন্ধু মিন্টুর চশমা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল মাগর বাবুলের ছোবল থেকে বাচতে পারেনি। তাকে অন্য গাড়িতে যেতেই হয়েছে। সাথে আমি সহ নিটু, অরুন ও অন্যান্যদের একই পরিণতি হয়েছে। গাড়িতে কি শুশ্রি গানের আড্ডা তা বলা যেমন যাবেনা আবার বলে শেষও করা যাবেনা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমরা রামু চা বাগানের পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে হালকা স্ন্যাক্স গ্রহণ করি। প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যে আমরা আবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন লেকের উদ্দ্যেশ্য রওয়ানা দিই। এখানে উল্লেখ্য যে, খুব সকালে বন্ধু কাজী জাহাঙ্গীর, জাফর ও অন্য বন্ধুরা রান্নার উপকরণ ও সামগ্রী নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি চলে যায়। আমরা গাড়ি নিয়ে দুপুর ১ টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি গিয়ে পৌছি। যেতে যেতে পথিমধ্যে আমরা কত মধুর আড্ডা ও অতীত জীবনের ফেলে আসা স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে কত হাসা হাসি, আড্ডা ও বেরসিক আলাপন-তার বর্নণা শেষ করা যাবেনা।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হয়ে আকাবাকা পাহাড় টিলা ও অরণ্যাদি মাড়িয়ে আমরা সেই স্বপ্নের ঐতিহাসিক উপবন পর্যটন কেন্দ্রে পৌছে একে একে গাড়ি থেকে নেমে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সবাই উঠি। অনেকের পরিবারের মধ্যে আমার পরিবার ছিল। আমার ছেলেটি পাহাড়, লেক, বন বনানী, ঝুলন্ত ব্রীজ ও সুন্দর প্রাকৃতিক নিদর্শন দেখে আমাকে বলে বাপ্পা এটি তো অনেক সুন্দর!
নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক একটি কৃত্রিম লেক বা হৃদ। এ স্থানটি ইকো ট্যুর ও পিকনিক স্পট হিসেবে সমধিক পরিচিত। সবুজ ও নীলের মাঝে লেকের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে ঝুলন্ত ব্রীজ। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এই লেকের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রীজটি। এই ব্রীজটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে দৃষ্টি নন্দন সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির সবুজ পাতার গাছের সমাহার। এখানে মাছ ধরা ও নৌকা বাইচের যেমন সুবিধা রয়েছে, তেমনি পাহাড় কন্যা নাইক্ষ্যংছড়ির নয়ানাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগও রয়েছে- যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনে আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। এখানে বনের মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে আকাশ বাড়ি, পিকনিকের জন্য ছোট বেশ কয়েকটি ঘর। চারদিকে সবুজ অরণ্য ঘেঁষে পাহাড় চূড়ার উপর হ্রদের এমন দৃষ্টিনন্দন রুপ যে কাউকে বিমোহিত করে। ইদানিং পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নাইক্ষ্যংছড়ির উপবন লেক। লেকের শান্ত জলের ওপর ঝুলন্ত সেতু মূলত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে বনের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করছেন এই পর্যটনকেন্দ্রে।
আমার ছেলে উপবন লেকে এসে অনেক মজা করেছে। সাথে তারই সমবয়সী মিন্টুর ছেলে মেয়ে ছিল, খুবই মজা পেয়েছে। ছেলে আমাকে বলে চল আমরা নৌকা নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণ করি। পরে তার মা, মিন্টূর ওয়াইফ ও তার ছেলে মেয়ে নিয়ে ঝুলন্ত ব্রীজ অতিক্রম করতে গিয়ে মাঝপথে ফিরে আসে। কারণ পর্যটকের ভারে ঝুলন্ত ব্রীজটি এমনভাবে নাচন শুরু করে দিয়েছিল যেন ৯ মাত্রায় ভুমিকম্প হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের বন্ধুবর জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী যেভাবে হাত পা দোলিয়ে সেনা বাহিনীর মতো লেফট রাইট করতে করতে ব্রীজটি পার হচ্ছিল দেখে মনে পড়ছিল- He is the leader-who knows the ways, moves the ways and shows the ways জাহাঙ্গীরের দেখানো পথে সারি সারি অনেক বন্ধু পেছনে গিয়ে ব্রীজটি পার হয়ে ঔ পাড়ের মানুষের সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনা, চিন্তা-অনুভুতির সাথে মিশে যায়। পরে শুনি আমার বন্ধুদের অনেকেই তাজা ডাব কিনে ডাবের পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করার কথা! সেই কী প্রাণের উচ্ছ্বলতা! কাজী জাহাঙ্গীর মিউজিক্যাল প্রোগ্রামের ইন্সট্রুমেন্ট রেডি করার কাজে ব্যস্ত, বাচ্চু বন্ধুদের প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করা, বন্ধুর পরিবারের সদস্যদের খোজ খবর নেওয়া, নেতা জাহাঙ্গীর অনেকদিন পরে বন্ধুদের সরব উপস্থিতিতে সবার সাথে হাস্যরসে আলাপ চারিতায় ব্যস্ত ছিল, পরিবার নিয়ে আসা বন্ধুদের পরিবার পরিজনের খোজ খবর নিচ্ছিল, আবার কিছু বন্ধু (তাদের নাম উল্লেখ না করলেও অনেকেই বুঝে গেছেন) পরিবার নিয়ে আসা বন্ধুদের পরিবারে অশান্তির বীজ বপন করার লক্ষ্যে ইনিয়ে বিনিয়ে বন্ধুদের নামে বিভিন্ন কথা বলে বন্ধুদের দাম্পত্য সম্পর্কের দৃঢ়তা নিরুপণ করছিল। এ প্রসংগে আমার পরিবারকে ফাটল ধরাবার কত চেষ্টা, বাহনা করেছে আমার বন্ধুরা তা বলাই বাহুল্য! এ কাজে কায়সার মামা, এড রেজা মামু, বাচ্চু মামু, বাবুল মামু, কাজী জাহাঙ্গির মামু ও নেতা জাহাঙ্গীর ভাই চেষ্টা চালিয়েছেন বলে লেট আপডেটে জানতে পারি! আবার অন্যদিকে মিন্টু সাহেব এদিক ওদিক ঘোরাঘুরিতে থাকলেও তার পরিবার পরিজনদের সেবা যত্ন করার কোন বালাই ছিলনা –শুধু কোথায় গিয়ে লুকালে অন্যদের কিছু খাওয়া, পানীয় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা থেকে রক্ষা পেতে হবে-সেই চিন্তা ও ধান্ধায় বর্ণচোরা হয়ে থেকেছিল। মাষ্টার নাসির, কায়সার, বাবুল, নিটু, দিশু, জাহেদ, মোস্তফিজ, ভুট্রো, রুপন, মাকসুদ, মণোজ, রহিম, আজিজ, গফুর, আশিষ, রীতা, মোন্তাহারা, রোকসানা, এড। রেজা। ঐদিকে টেকনাফের ছিদ্দিক, খলিল, শুক্কুরসহ টেকনাফের বন্ধুরা উচু টং ঘরে বসে আলো বাতাসে দোল খাওয়ার সাথে তৃষ্ণা নিবারণে বারবার তাজা ডাবের পানি খাচ্ছিল। ভ্রমণের বেশিরভাগ সময় তারা টং ঘরে কাটিয়েছিল।
পরে একে একে যখন মিউজিকে গান চলছিল-সাথে যোগ দেয় বন্ধু মাকসুদ, আশীষ, বাচ্চু, জাহেদ, বাবুল, নেতা জাহাঙ্গীর, রীতাসহ অনেক বন্ধু। প্রায় বেলা আড়াইটার দিকে কুক রান্না শেষে রান্না বান্নার সামগ্রী নিয়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে আসছিল। সবার মনোযোগ কিন্তু ঐদিকেই বেশি ছিল। কারণ পরিবারের সদস্যসহ বন্ধুরা প্রায় ক্লান-শ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। পরে সারিবদ্ধভাবে একে একে পরিবারের সদস্যদের ভাত, মাছ, মাংস ও অন্যান্য সামগ্রীসমেত লাঞ্চের প্লেট তুলে দিচ্ছিল। এ কাজে রেজা, নাসির, কায়সার, রুপন, নেতা জাহাঙ্গীর, মোস্তফিজ ও অন্যান্যরা সার্বিক সহযোগিতা করছিল।
খাওয়া দাওয়া শেষে সববন্ধুদের নিয়ে ফটোসেশনপর্ব, পরিচিতিপর্ব, আলোচনা সভা, বন্ধু নেতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর নাতিদীর্ঘ বক্তব্য উপস্থাপন শেষে এবং নেতা জাহাঙ্গীরের প্রদত্ত উপহার বিতর শেষ করে বিকাল ৫টার দিকে সেই ঐতিহাসিক নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক ত্যাগ করে নিজ নিজ গাড়িতে আরোহণ করে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা করি।
দিনব্যাপী নানা আয়োজনে উদযাপিত এসএসসি ব্যাচ-১৯৯২ এর পিকনিক ও পারিবারিক মিলন মেলায় অনেক আনন্দ ও মজা হয়েছে। প্রতিবছর একটি দিন এভাবে সব বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে কাটিয়ে দিতে পারলে বন্ধুত্বের বন্ধন যেমন অটুট থাকবে, তেমনি বন্ধুদের মাঝে এক আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই এ বয়সে একটু বিনোদনের খোরাক সঞ্চিত হবার উপলক্ষ সৃষ্টি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
পাহাড়ের গায়ে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা বিশাল লেকটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই পর্যটনকেন্দ্র। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানকার সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়ার পরে, স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্তের পর্যটকরাও ছুটে আসছেন এখানে। ঝুলন্ত সেতুতে চড়ে ও ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চারপাশের বনের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। আমরাও সেই মনোমুগ্ধকর পরিবেশর অকৃত্রিম স্বাক্ষী হয়ে রইলাম। নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেক এ এসে বন্ধুদের অনেক অনেক ভালো লেগেছে, পরিবার পরিজনের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে আনন্দের ফল্গুধারা।
লেখকঃ ভাইস প্রেসিডেন্ট- উপজেলা প্রেসক্লাব উখিয়া এবং প্রেসিডেন্ট -বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)