ঢাকামঙ্গলবার , ১৬ মে ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উখিয়ায় ‘মোখা’ পরবর্তী নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দামে আগুন-প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা।

admin
মে ১৬, ২০২৩ ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

।এম আর আয়াজ রবি।

চাহিদা ও যোগানের নেতিবাচকতা, অভাব ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে আজকে জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পরিপূর্ণ। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অযাচিত দৈত্য। দু’মুঠো খেয়ে পরে জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য-যেন এক পাগলা ঘোড়ার লাগামহীনতা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির শিকার প্রধানত দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ-তথা কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, পেশাজীবী, কারিগর, নির্দিষ্ট আয়ের মানুষগুলো। মেহনতি মানুষের মজুরি বাড়ে না, কৃষক ফসলের যুক্তিসঙ্গত দাম পায় না, কর্মচারীদের বেতন দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বাড়ে না। এ এক অনিশ্চিতের দিকে ধাবিত আমাদের জীবনের চলার গতি।
বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, ফলে দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে জীবন চালাতে গিয়ে সীমিত আয়ের সৎ, অসচ্ছল মানুষের জীবনে নেমে আসে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন সীমিত, তেমনি জিনিসপত্রের বাজারদর দ্বারাও তা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থনীতির ভাষায় বলা যায়, মানুষের আয় যতটা বাড়ে সেই তুলনায় যদি জিনিসপত্রের দাম বেশি বৃদ্ধি পায়, তাহলেই তার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। এই ক্রয়ক্ষমতাই হলো তার ‘প্রকৃত আয়’। ‘প্রকৃত আয়’ বৃদ্ধি না পেয়ে যদি একই জায়গায় স্থির থাকে বা কমে যায় তাহলেই শুরু হয় জীবনের আশাভঙ্গের নিদারুণ যন্ত্রণা।

কক্সবাজারের উখিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অজুহাতে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী। মোখা পুর্ববর্তী ও পরবর্তী গত কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সব্জির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। উখিয়া দারোগা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শামসু বলেন,’বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকেই সব্জির সরবরাহ কমে গেছে। সবজির চাহিদা বেশি ও সরবরাহ কম হওয়ায় সবজির মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে’।

কিন্তু অন্যদিকে ভোক্তারা বলছেন, বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য কারসাজির আশ্রয় নিয়ে অবৈধ, লোভী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা পন্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। উখিয়া সদরের সচেতন ভোক্তা জনৈক হাসেম অত্র প্রতিবেদককে জানান, ‘গত দু’দিন পুর্বে পেয়াজ কিনেছি ৫০ টাকা, আজকে সেই পেয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে চিনি কিনেছি ১১০ টাকায় আজকে চিনির কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০। মোখা পরবর্তী বাজারে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মুল্য ২০ টাকা থেক ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এগুলো একটি সুযোগ সন্ধানী সেন্ডিকেট চক্র কৃত্রিমভাবে নিত্য পন্যদ্রব্যের মুল্য বৃদ্ধি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনের রীতিমতো বাজার মনিটরিং এর অভাবেই সিন্ডিকেট চক্র এত বেশি লাগামহীন হয়ে পড়েছে’ বলে তিনি যোগ করেন।

এখানে একটি অর্ভেদ্য সিন্ডিকেটচক্র অন্তরালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে সুত্রে উঠে এসেছে। উখিয়া সদর, কোটবাজার, সোনার পাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার এক ধরনের পন্যের মুল্য আবার অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাদদেশে অবস্থিত কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী বাজারের পন্যের কোয়ালিটি অনুপাতে পন্যের দামের ভিন্নতা রয়েছে। মুলত: সবখানে একটি সুপ্ত সিন্ডিকেটচক্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাকি দিয়ে বা ম্যানেজ করে এসব অপকর্মে চালিয়ে যাবার খবরাখবর প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

উখিয়া সদর, কোটবাজার, সোনার পাড়া বাজার, মরিচ্যা বাজার এক ধরনের পন্যের মুল্য আবার অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাদদেশে অবস্থিত কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী বাজারের পন্যের কোয়ালিটি অনুপাতে পন্যের দামের ভিন্নতা রয়েছে। মুলত: সবখানে একটি সুপ্ত সিন্ডিকেটচক্র প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাকি দিয়ে বা ম্যানেজ করে এসব অপকর্মে চালিয়ে যাবার খবরাখবর প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

গতকাল উখিয়া সদর, কোট বাজার ও কুতুপালং বাজার ঘুরে দেখা যায়, বরবটি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, প্রতি কেজি কাকরল বিক্রি হচ্ছে ৮০/৯০ টাকায়, ঢেড়স ৮০ টাকা, টমেটো ১২০/১৪০ টাকা, পটল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, ফুলকপি ১৬০, বাঁধাকপি ৮০, লাউ ৬৫, চিচিঙ্গা ৮০, কাঁচা পেঁপে ৭০, ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। গাজর ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
এছাড়া অন্যান্য সবজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। করলা, কাঁকরোল, উস্তা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স, পেঁপে, পটল, কচুর লতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আলু ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া বাজারে প্রতি আটি লাল শাক, মুলা শাক, কলমি শাক ৩০ টাকা, পুঁই শাক, লাউ শাক ৩৫ টাকা, ধনে পাতা কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতো ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি। আর মাছের দামও খুব চড়া। ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারনে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে অসুবিধার কারনে বাজারে এখন বেশিরভাগে মাছের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। ইলিশ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ১০০০, কোরাল ৮০০থেকে ১০০০, এবং রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, প্যাকেট ৬০ টাকা, লবণ ৪৫ থেকে ৫৫, পোলাউর চাল ১১০ থেকে ১৩৫। খোলা ময়দা ৫০ টাকা, প্যাকেট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, খেসারি ৭৫ থেকে ৯০ টাকা, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, বুট ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।

প্রত্যেকটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারের কাছ থেকে মানুষ যে দু’টি বিষয় বেশিমাত্রায় প্রত্যাশা করেন- তার একটি হলো আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ বা উন্নতি, অন্যটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রন বা ঊর্ধ্বগতি রোধ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জনগণের কাছে সরকারের মুষ্টিমেয় ভালকাজের বা সুকীর্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষংগ। এ ব্যাপারে সরকার তাদের সাধ্যের মধ্যে সব কিছু করবে্ন, জনগণ এটাই প্রত্যাশা করেন। কিন্তু দেশে নজিরবিহীন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর লাগামহীন উর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। যথাযথ বাজার মনিটরিং এর অভাব,বাজারের নিয়ন্ত্রনহীনতা ও শাসকদলীয় সিন্ডিকেটের কারণে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাচ্ছে না বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।