ঢাকাশুক্রবার , ২৬ মে ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উখিয়া টেকনাফ যেন এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি-কথায় বলে ‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়’! !

admin
মে ২৬, ২০২৩ ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

। এম আর আয়াজ রবি।।

‘পেটে খেলে, পিঠে সয়’-কথাটি যুগসই। কিন্তু উখিয়া টেকনাফবাসী পীঠে সয়েই যাচ্ছে সবকিছু কিন্তু পাছে বর্গীরা সব লুটপাট করে খেয়েই সাবাড় করছে ! এক যুগেরও অধিক সময় ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করে, ‘গাছেরটা খেয়ে (গাছের) নিচেরটাও কুড়িয়ে’ যারা রথি মহারথি হয়ে জনগনকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে, সেসব তিলকে তাল করা মানুষগুলো মানবতার পরাকাষ্টা দেখিয়ে আজ লৌকিক দানশীলতা করে ‘রঙ দিয়ে সং সেজে’ দানবীর হয়ে মহাবীর তকমা নিয়ে সাধারণ মানুষের ভূয়সী প্রশংসা কুড়াচ্ছে!

কিন্তু, আমাদের উখিয়া টেকনাফকে যারা মাদক, ইয়াবা, আইস, স্বর্ণের বারসহ অন্যান্য চোরাচলানের উর্বর ভুমি (স্বর্গ বানিয়ে) করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি ভয়াবহ অন্ধকার চোরাবালিতে রেখে-যারা আত্মতৃপ্তিতে ভোগছেন তারা নিশ্চয়ই জনগনের সেবক হতে পারেন না।
অন্যদিকে, উখিয় টেকনাফ অপহরণ, গুম, খুন যেন নিত্য সাথী। গত ৪ মাসে প্রায় ত্রিশোর্ধ খুন হয়েছে, অপহরণ হয়েছে প্রায় শতাধিক, মুক্তিপণ দিয়ে ছেড়ে নিয়েছে প্রায় সত্তরোর্ধ, লাশ ও গলিত লাশ পাওয় গিয়েছে প্রায় পাঁচের অধিক! রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট বাণিজ্যে কিছু কিছু ভূঁইফোড় ব্যবসায়ী ধরাকে সরা জ্ঞান করে নিত্যপ্র‍য়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে ফুয়েল যোগান দিয়ে সাধারণ মানুষকে রীতিমতো বিষিয়ে তুলছে।

সচেতন মহলের দাবি-রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে উপজীব্য করে উখিয়া টেকনাফে যেসব কর্মযজ্ঞ চলছে বা চলেছে, একসেন্সে উখিয়া টেকনাফ সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার মতো উর্বর ভুমি হবার কথা ছিলো। ( যদিও বা পাহাড়, বনভুমির উজাড়, পরিবেশ বিপর্যয়, নদী-খাল ভরাট, কৃষি জমি ধ্বংসসহ জীবন প্রকৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাবের কথা বাদই দিলাম)। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত যতই অনুদান এসেছে তার কমপক্ষে ২০% হোস্ট কমিউনিটি অর্থাৎ স্থানীয় জনগনের জন্য বরাদ্দ ছিলো।সচেতন মহলের অভিমত-হোস্ট কমিউনিটির সেই বরাদ্দের ৫০% যদি উখিয়া টেকনাফের জনগনের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হতো, তাহলে উখিয়া টেকনাফ স্বর্ণের মোড়কে আচ্ছাদিত হয়ে পড়তো! কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখেছি? মুষ্টিমেয় ব্যক্তি উখিয়া টেকনাফের ন্যায্য জিস্যাকে নয় ছয় করেছে। আবার সুবিধাবাদী কর্তাব্যক্তিরা বৃহত্তর চট্টগ্রামকে হোস্ট কমিউনিটির আওতায় এনে, আমাদের স্থানীয়দের সুযোগ সুবিধাগুলোকে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে, বিকেন্দ্রীকরণের নামে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষগুলোকে সুযোগ করে দিয়ে বস্তুত: আমাদের ( স্থানীয়দের) উপর যে অন্যায্য কাজ ও অবিচার করেছে, তা বলাই বাহুল্য!!

উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয় শিক্ষিত যুবক/ সমাজের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরী হবার এবং চাকুরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের শর্তগুলো শিথিল হবার কথা ছিল! কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় শিক্ষিতদের কিভাবে চাকুরি থেকে বাইরে রাখা যায় সেসব শর্তাবলি জুড়ে দিয়ে চাকুরি প্রাপ্তিতে স্থানীয়দের প্রচ্ছন্নভাবে দূরে রাখা হয়েছে/হচ্ছে। চাকুরিতে স্থানিয়রা শুধু নিম্ন পর্যায়ের পদবিগুলো এনজয় করছে যা অনেকক্ষেত্রে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে অর্জন করতে হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে! ব্যবস্থাপক বা নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে স্থানীয়দের হার অতি নগন্য বা নেই বললেই চলে। কিন্তু একটি প্রোগ্রামকে বা প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করার বা নেতৃত্ব দেবার উপযোগী অনেক শিক্ষিত বেকার উখিয়া টেকনাফে নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু তারা কোনভাবেই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না দেশি বা জাতীয় ষড়যন্ত্রের অংশের কারনে!! ইতিমধ্যেইচাকুরী থেকে বিভিন্ন অজুহাতে স্থানীয়দের ছাটাই করেছে। চাকুরির বাজারেও সিন্ডিকেট চক্র সচল রয়েছে। চাকুরী দাতারা কৌশলে স্থানীয়দের বাছাইপর্বেই খতম করে দিয়েই শর্ট লিষ্ট করে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন সমাজ, নেতা নেতৃ ও জনপ্রতিনিধিরা বরাবরই উদাসীন ছিল।
স্থানীয় নেতা নেতৃবৃন্দ তেমন কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবার প্রয়োজনও মনে করেন নি! (সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, শিক্ষিতদের চাকুরি হলে তারা স্বাবলম্বী হলে পরে নেতারা তাদেরকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না অজুহাতে চাকুরির ক্ষেত্রে স্থানীয় শিক্ষিতদের চাকুরি প্রদানে তেমন প্রচেষ্টা থাকে না! আমি কথাটির ব্যাপারে নিশ্চয়ই দ্বিমত পোষন করি, কেননা এরুপ মনমানসিকতার মানুষ আর যাই হোক না কেন, নেতা হতে পারেননা!)

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে রীতিমতো অস্ত্রের ঝনঝনানি। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ইয়াবা, স্বর্ণ, আইসসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের বিস্তার যেন মামুলি ব্যাপার। ক্যাম্পভিত্তিক মাদকের সিন্ডিকেটগুলোর সাথে স্থানীয় স্বার্থপর মানুষের কম্বিনেশন সারাদেশে মাদক বিস্তারে বাঁধাহীন বিচরন যেন দেশকে মাদকের আঁকড়ায় পরিনত করে রেখেছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষ বিপক্ষ গ্রুপ সৃষ্টির নামে ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীদের প্রচ্ছন্ন রাজত্ব দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব চরম হুমকিরমুখে। অন্যদিকে চলছে ক্যাম্পভিত্তিক স্বার্থান্বেষী বিবদমান পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের নামে অপহরণ, মুক্তিপণ, খুন-খারাবী ও রক্তের হুলিখেলা। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে উখিয়া টেকনাফের নেতৃস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বরাবরই নির্বিকার! যেন দেখেই দেখে না, বুঝেও বুঝে না! এই উখিয়া টেকনাফ জাপানের ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির মতো সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে! যেকোনো মুহুর্তে এর লেলিহান শিখার উদগীরণ ঘটলে সামাল দেবার সক্ষমতা উখিয়া টেকনাফ তথা দেশের পক্ষে আছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহের অনকাশ রয়েছে। তাই ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’!

উখিয়ায় জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক জাতীয় পর্যায়ের নেতার বড়ই অভাব। যিনি বা যারা তাদের ক্ষুদ্রগন্ডীর বাইরে এসে সামষ্টিকভাবে উখিয়া টেকনাফের গণ মানুষের সার্বিক উন্নতি,কল্যাণের চিন্তা করেন এবং রাজনৈতিক পরিচয়, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে গনমানুষ, সমাজ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সম্পৃক্ত হয়ে সত্যিকারের জাতীয় বীরের তকমা নিয়ে দেশ ও জাতির সেবায় এগিয়ে যাবেন।

উখিয়া টেকনাফকে একপ্রকার সুপ্ত আগ্নেয়গিরিতে রেখে আমাদের নেতা নেতৃরা বিভিন্নভাবে দানবীর সেজে মহাবীর তকমায় আসীন হয়ে প্রশংসা কুড়াতে পঞ্চমুখ হয়ে আছেন। কিন্তু ভিতরে উখিয়া টেকনাফের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার অস্তিত্ব সংকটে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছে, সেদিকে কারো খেয়াল নেই!

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। প্রেসিডেন্ট -বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) উখিয়া উপজেলা শাখা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট উপজেলা প্রেসক্লাব উখিয়া।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।