ঢাকারবিবার , ৪ জুন ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৩-এর প্রতিপাদ্য বিষয়: The solution to Plastic Pollution ( প্লাস্টিক দূষণ রোধই মুক্তি)

admin
জুন ৪, ২০২৩ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

।।এম আর আয়াজ রবি।

বিশ্বব্যাপি পরিবেশ দূষণ নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৭৪ সালে ৫-ই জুনকে, প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী কাল, ৫-ই জুন, বিশ্বজুড়ে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালিত হবে । এ বছর ( ২০২৩) বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে The solution to Plastic Pollution অর্থাৎ প্লাস্টিক দূষণের সমাধান।

এ বছরের উপজীব্য বিষয় যেহেতু প্লাস্টিক- তাই প্লাস্টিক নিয়েই আজকের লেখার অবতারণা। পরিবেশে পঁচনরোধী প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য, উপজাত, কণিকা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য নিঃসরিত অণুর সংযোজন; যা মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে, তাকে সাধারণভাবে প্লাস্টিকদূষণ বলা হয়।

সাধারণত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থগুলো তৈরি করা হয় জীবাশ্ম জ্বালানী, যেমন- তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসকে ব্যবহার করে। আমরা যখন তেল বা খনিজ পদার্থ ভূ-ত্বক হতে নিষ্কাশন করি, তখন বিপুল পরিমাণ দূষিত পদার্থের নির্গমন ঘটে। এসব পদার্থের ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, ওজোন, বেনজিন এবং মিথেন। এসব পদার্থ গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী।

এক গবেষণায় পাওয়া যায়, প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বে পঞ্চম। অন্যদিকে বাংলাদেশে এককভাবে দিনে তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। ইউএনইপির হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিদিন তিন কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর ৮০ লাখ টন প্রধান ১০টি নদী অববাহিকা দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়ছে। এই ১০ নদীর আটটিরই উৎসস্থল চীন। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দূষণের প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও আছে।

পরিবেশগত,অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের উপর বিরাট এক ভূমিকা রেখে চলছে। এখনই যদি আমরা এসব নিয়ে ভাবতে না শিখি তাহলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই সংকটাপন্ন হয়ে যাবে। তাহলে আমরা কী করতে পারি?

১) আমাদের উচিত প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ বর্জন করা।
২) আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার সীমিত করা।
৩) পাটজাত দ্রব্যের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশের হারানো ঐতিহ্য পাটশিল্পকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা। সব জায়গায় প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।
৪) জনগণকে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা।
৫) পাটজাতীয় পদার্থ ব্যবহারের কারণে সরকারীভাবে ভোক্তা এবং উদ্যোক্তাদের পুরষ্কৃত করে তাদেরকে এসবের ব্যবহারে আরো উৎসাহিত করা।
৬) যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার কারণে পর্যাপ্ত শাস্তি এবং জরিমানার ব্যবস্থা করা।
৭) প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের উপর অত্যাধিক শুল্কারোপ করে পাটজাত পদার্থের মূল্য কমিয়ে পাটজাত পণ্যকে আরো সহজলভ্য করে তোলা।

বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডিও)-এর করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জলে-স্থলে বর্তমানে ৬৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়েছে। প্রতিদিন এর সঙ্গে তিন হাজার টন করে যোগ হচ্ছে। সংস্থাটি দেশের পরিবেশের জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগকে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, দেশে যেখানে জৈব বর্জ্য বৃদ্ধির হার পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ। সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যের বৃদ্ধির হার সাড়ে সাত শতাংশ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছে। এসডিও-এর ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ব্যবহৃত হওয়া বেশির ভাগ প্লাস্টিক মাটি ও পানিতে গিয়ে জমা হয়। এগুলো আলাদা করে সংগ্রহ ও পুনঃব্যবহারের কোনো প্রক্রিয়া নেই। এগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক ডাই-অক্সিন ও হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করে। যা উদ্ভিদ ও মাছের সঙ্গে মিশে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে।

পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির বাহক। সৃষ্টির শুরু থেকেই পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপরেই তার অস্তিত্ব নির্ভর করে আসছে। পরিবেশ প্রতিকূল হলে জীবের ধ্বংস ও বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মানুষ, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী-জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। কিন্তু নানা কারণে পরিবেশদূষণ সমস্যা প্রকট হওয়ায় মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে চলছে নানা ধরনের গবেষণা।

আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন পরিবেশ-প্রকৃতি। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ পরিবেশকে আমরা নানাভাবে দূষিত করে আসছি। বিশ্বজুড়ে এখন পরিবেশদূষণের মাত্রা ভয়াবহ। পরিবেশদূষণের উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে রয়েছে অত্যাধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বনভূমি উজাড়, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দ্রুত শিল্পায়ন, সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য, গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, অপরিকল্পিত গৃহনির্মাণ, দারিদ্র্য, প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিক দ্রব্যের ব্যবহার ইত্যাদি।

লেখক: প্রেসিডেন্ট: বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) উখিয়া উপজেলা শাখা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।