আগামীর নীতি-নির্ধারণীতে ইনকিলাব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে : এ এম এম বাহাউদ্দীন
আইকন নিউজ ডেস্কঃ
দেশের হাজারো গণমাধ্যমের ভিড়ে ইনকিলাব স্বমহিমায় উদ্ভাসিত এবং আদর্শিক মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেছেন, ইনকিলাব শুধু একটি পত্রিকাই নয় ইনকিলাব একটি দর্শন, আদর্শ। ৩৭ বছর চলার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সংবাদ প্রকাশে ইনকিলাব কখনোই আপোস করেনি। গতকাল রোববার দৈনিক ইনকিলাবের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইনকিলাব ভবনে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ইনকিলাবের চলার পথের সাথী হিসেবে থাকার জন্য সকল পাঠক, লেখক, সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিজ্ঞাপনদাতা সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, এখন অর্থনৈতিক কারণে সময় হয়তো খারাপ যাচ্ছে। কিন্তু আদর্শের কারণেই দেশের রাজনীতির নীতি নির্ধারণীতে ইনকিলাবের প্রভাব ছিল এবং আগামীতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ইনকিলাব গণমানুষের মুখপত্র। মানুষের চিন্তা চেতনা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ইনকিলাব ধারণ করে। দেশে জনগণের পরিপন্থী কোনো কিছু হলে প্রতিবাদের লক্ষ্যে সবাইকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে ইনকিলাব। ইনকিলাব যা পারে তা অন্য সব পত্রিকার পক্ষ্যে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উৎরাই পার করছি। দুর্দিনে আর্থিক সঙ্কটে কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীদের সময় মতো বেতন দিতে পারিনি। অন্ধকার কেটে যাবে; সামনে সুদিন আসবে। আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছি। আমি সবার কথা বুঝি, সবার কথা ফিল করে বলছি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সফলতা আনবে এটা সুনিশ্চিত।
দৈনিক ইনকিলাবে কর্মরত সকল সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, রাত যত গভীর হয়; আলো তত নিকটে চলে আসে। আমাদের দুর্দিন কেটে যাবে এবং সামনে সুদিন আসছে। অসংখ্য জ্ঞানীগুনি মানুষ ইনকিলাবে কাজ করছে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইনকিলাব হাজারো প্রতিবন্ধকার মধ্যে স্বমহিমায় টিকে রয়েছে এবং মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। অনলাইন এবং স্যাটেলাইট টিভির ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর প্রচারের কারণে এখন সারাবিশ্বেই প্রিন্ট মিডিয়ার ক্লান্তিকাল চলছে। ইউরোপ, আমেরিকায়ও অনেক আন্তর্জাতিক মানের প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ হয়েছে এবং খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। আমাদের দেশের প্রিন্ট মিডিয়া এর ব্যাতিক্রম নয়। কর্পোরেট হাউজগুলো গণমাধ্যমকে নিজেদের টাকা বানানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেও ইনকিলাব সে ধরণের পত্রিকা নয়। জন্মলগ্ন থেকেই ইনকিলাব আদর্শ নীতি থেকে সরে আসেনি। তবে আশার কথা পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে,
পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলেই আসবে। একটা দুসংবাদ দিয়ে দুটো সুসংবাদ পাওয়া যাবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সব সমস্যার পরও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মনে রাখতে হবে প্রচার সংখ্যা বেশি হলেই পত্রিকার প্রভাব বেশি হবে এমন নয়। ইনকিলাব এক সময় আড়াই লাখ কপি বিক্রি হতো। এখন সে অবস্থা নেই। তবে অনলাইনে দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন ইনকিলাব পড়েন। সংখ্যা কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তির মাফকাঠি হয় না। বিশ্বে প্রায় দুইশ দেশ রয়েছে। অথচ সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে সাতটি দেশ। ১ শতাংশ দেশ সারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে। ১ শতাংশ পরিবার বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে। অতএব নীতি-নির্ধারণীতে ইনকিলাবের প্রভাব ছিল আছে এবং আগামীতেও থাকবে।
মহাখালী গাউসুল আজম মসজিদের খতিব মাওলানা রূহুল আমীন খান বলেন, দীর্ঘ তিন যুগের বেশি সময় ধরে দৈনিক ইনকিলাব চলছে। এজন্য আমরা সকলেই আল্লাহর দরবারে সুকরিয়া কামনা করছি। মুসলিম জাহানের অন্যতম নেতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:) আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি আমাদের হৃদয়ে যুগ যুগ থাকবেন। আর বাহাউদ্দীন ভাই শুধু একজন সম্পাদক নয় তিনি আমাদের অভিভাবক। আমরা যখন হতাশগ্রস্থ হয়ে যাই, আমরা যখন নিরাশ হয়ে গেছি তখন তিনি নিরাশ না হতে বলেন। তিনি আমাদের বলেন, আমরা তো শূন্য থেকেই শুরু করেছি। আল্লাহ আমাদের ভালো করবেন। অনেক দুর্যোগ এসছে, দুর্দিন এসেছে কিন্তু কোনো দিন তার কাছ থেকে নিরাশার কথা শুনিনি। অনেক চক্রান্ত হয়েছে কিন্তু কোনো চক্রান্তই আমাদের সম্পাদককে মাথা নত করাতে পারেনি। তিনি যেন সময় উপযোগী কর্মপন্থা অবলম্ভন করতে পারেন সেই দোয়া করি। মাওলানা মান্নান বলতেন ইনকিলাব একটি পরিবার, একটি চেতনা। সেই চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বীর আহমেদ মোমতাজী বলেন, অনেক বাধা বিগ্ন সহ্য করে দৈনিক ইনকিলাব আজ প্রতিষ্ঠত। ৩৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সবাইকে অভিনন্দন। আমি একটা কথাই বলতে চাই দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের সাথে যখন কোনো সমস্যা নিয়ে বসি, কথা বলি, তখন তিনি কখনো হতাশার কথা বলেন না। নিরাশার কথা বলেন না। তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখান।