ঢাকামঙ্গলবার , ২৭ জুন ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উখিয়ায় পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে, তবে পার্শ্ববর্তী দেশের গরুতে তা সয়লাব হওয়ায় খামারিরা অখুশি 

admin
জুন ২৭, ২০২৩ ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আইকন নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র কুরবানির ঈদ কড়া নাড়ছে। মাঝে একদিন বাকি কুরবানের আনুষ্টানিকতা পালনে। এখন বলা যায় পশু কেনাবেচার ভরা যৌবন। পুরোদমে জমে উঠেছে উখিয়ার কোরবানির পশুর হাটসমুহ। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায়, উখিয়ার পশুর বাজারে কেনাকাটা, লোক সমাগম, নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে অত্যধিক। উখিয়ায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকসমুহের শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, বিকাশ, নগদ ও অন্যান্য বিভিন্ন মাধ্যমে উখিয়ায় কোটি কোটি টাকার লেনদেনের ছড়াছড়ি। এ ফাকে কিছু অসাধু নকল টাকার কারবারিরাও সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়।

সুত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উখিয়াতে গরুর হাট শুরু হলেও মুলতঃ গরু, মহিষ, ছাগল ও অন্যান্য কুরবানির উপযোগি পশুর প্রত্যাশিত কেনাবেচা শুরু হয়েছে এ সপ্তাহে অর্থাৎ এ সপ্তাহের শনিবার থেকে। উখিয়া উপজেলায় স্থায়ী/অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা ১৫ থেকে ২০টি পশু বেচা-কেনার হাট রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে দূরদূরান্ত থেকে পশু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা কিছুটা হতাশায় ছিল কিন্তু এ সপ্তাহে ক্রেতারা গরু কেনা শুরু করাতে তারা এখন অনেকটা আশাবাদী।

প্রথম দিকে ক্রেতা-বিক্রেতারা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও পরে অবস্থাভেদে  ক্রয়-বিক্রয় শুরু করে দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে গরুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরেও কোরবানির পশুর উচ্চমূল্য হাঁকা হচ্ছে। বাজারে কৃষক ও দেশীয় খামারীর পালিত পশুর সাথে সীমান্তবর্তী দেশের গরুতেও বাজার সয়লাব। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গবাদি পশুর লালন-পালন, খাদ্য ও অন্যান্য বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি কুরবানি পশুর পেছনে ব্যয় উঠে না আসায় প্রথম দিকে পশুগুলোর উচ্চ মুল্য হাকিয়ে ধরে রেখেছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। কুরবানির সময় যতই ঘনিয়ে আসছে গরু আর ধরে রাখার সুযোগ খুবই সীমিত হয়ে আসছে। কারণ কুরবানি ঈদে অনেকেই মৌসুমী পশু বেপারী বুনে যাওয়ায় লাভের আশায় অপরিকল্পিতভাবে পশু কিনে ধরে রাখার মতো পরিবেশ পরিস্থিত থাকে না।  অন্যদিকে পশুগুলো দূর দুরান্ত থেকে বিভিন্ন হাট বাজার ও স্পটে অবস্থান করাতে গিয়ে বাড়তি মেইন্টেইনান্স বাবদ খরচ যোগ হতে থাকায়, কুরবানের পুর্বমুহুর্তে এখন মোটামুটি সহনশীল/ যুগসই মুল্যে পশু ক্রয় বিক্রয় করার হিড়িক পড়েছে। 

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গাদের বসবাস। এখানে প্রতি বছর কুরবানির ঈদে দেশী-বিদেশী এনজিও সংস্থাসমুহ রোহিঙ্গাদের জন্যে কোরবানির পশু ক্রয় করে থাকে। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিও সংস্থার উদ্দোগে হোস্ট কমিউনিটির জন্যও কুরবানির পশু ক্রয় করে স্থানীয় অসহায় মানুষের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে। তারই ফলশ্রুতিতে উখিয়া টেকনাফের পশুর হাটগুলোতে অনেক কুরবানির পশুর কেনা বেচা হয়। কিন্তু এবার একটু ভিন্ন পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

কারণ হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ব মন্দা, অর্থনৈতিক মন্দা, এনজিও ও আইএনজিওদের বাজেট হ্রাস, লোকবল ছাটাই, বেকারত্ব/ছদ্মবেকারত্ব যেমন মানুষের আয় রোজগারের পথকে বারিত করেছে তেমনি,উখিয়া টেকনাফের স্থানীয়দের আয় রোজগারের পথ-বাসা ভাড়া, ঘর ভাড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য,কন্সট্রাকশন কাজের পরিধি  ও অন্যান্য আনুষঙ্গিকতার  পথ সীমিত হয়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ কুরবানের মত ওয়াজিব কাজটি করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

বিক্রেতারা আরো বলার চেষ্টা করেছেন-ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়েনি এমন কোনো পণ্য নেই। এ জন্য দেশের মানুষের কষ্টের সীমাও নেই। কেউ খাদ্য তালিকা থেকে খাবার কমাচ্ছেন, কেউ মাছ-মাংস কিনতে না পেরে শাকসবজি খাচ্ছেন। মানুষ না হয় একটি পণ্য ছেড়ে বিকল্প পণ্য গ্রহণ করে কিছুটা সাশ্রয় করছেন, কিন্তু অবলা প্রাণি বা গৃহপালিত পশুগুলো তো আর সাশ্রয় বুঝে না। সম্প্রতি পশু খাদ্যেরও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এজন্য খামারি ও সারাদেশের কৃষক পড়েছেন নানা বিপাকে। পশুপালন করা এখন তাদের কাছে দুরুহ হয়ে পড়েছে।

কুতুপালং এলাকার স্থানীয় যুবক রফিকের বরাতে জানা যায়-রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কুরবানির পশু রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় রোহিঙ্গা এলাকার আশে পাশের বিভিন্ন হাটে পশুর কেনাবেচা শুরু হয় ঈদের দুয়েকদিন পুর্ব থেকে। তাই এখন পশুর হাটে বেচা কেনা চলছে।

উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে স্থায়ী/অস্থায়ী হাটের আয়োজক ও পশু ব্যবসায়ীরা বলছেন-এখন অর্থাৎ শনিবার থেকে কুরবানের দিন সকাল পর্যন্ত পশু কেনাবেচার মুখ্য সময়।  এখন পুরোদমে  পশুর হাটে পশু বেচা-কেনার ধুম পড়ছে। আমরা মনে করি ভোক্তারা তাদের পছন্দমত পশু ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছে।

ক্রেতাদের চাহিদা, রুচি, আর্থিক সঙ্গতি প্রভৃতি অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় নানা রং ও আকৃতির পশুর সমাহার ঘটেছে উখিয়ায় বিভিন্ন হাট-বাজারে। এখানে বিভিন্ন সাইজের, বিভিন্ন চাহিদার পশু রয়েছে। পশুর ধরণ ও সাইজভেদে কয়েক হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা দামের পশু আনা হয়েছে হাট/বাজারে।

উখিয়া সদর পশুর/গরুর বাজার, মরিচ্যা বাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন কুতুপালং, টিভি টাওয়ার সংলগ্ন বাজার, বালুখালী, থাইংখালী ও পালংখালীর পশুর হাট/বাজার সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে এমন চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পয়েন্টের তুমব্রু এলাকার জনৈক গরু বেপারী বলেন-গত দেড় মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলী, লম্বাশিয়া, ভালুক খাইয়া, চাকঢালা, ও দৌছড়ির পয়েন্টে চোরাই পথ দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে গরু-মহিষ।

দেশে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও কুরবানির আগে একাধিক চোরাচালন চক্র সীমান্ত পথে গরু এনে থাকে। এবারো মিয়ানমারের সীমান্ত পথ দিয়ে অবৈধভাবে দেশে গরু প্রবেশ করছে। চোরাচালানিদের সঙ্গে গরু বেপারিদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পার করার পর ব্যাপারি ও দালালদের মাধ্যমে গরু একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলে যাচ্ছে। এবারে কিছু মহিষও আনা হচ্ছে। এতে দেশের খামারিরা লোকসানের মুখে পড়তে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ একাধিক উপজেলায় বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের পশু প্রবেশ করেছে। এসব পশুর অধিকাংশ রাখা হচ্ছে রামু, নাইক্ষ্যংছড়ি,চকরিয়া, উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে। এসব পশু বেচাকেনা চলছে প্রকাশ্যে। প্রতিটি গরু ও মহিষ মিয়ানমার থেকে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় কিনে তা বিক্রি করা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। ইতিমধ্যে গত ৮ জুন নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির আলাদা অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের ৪০টি গরু জব্দ করে।

অবশ্য সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি ও কোষ্টগার্ড মিয়ানমার থেকে গরু প্রবেশ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের একাধিক খামারি বা কৃষক দাবি করেছেন, অবাধে মিয়ানমার থেকে গরু আসার কারণে দেশীয় পশুর চাহিদা ও দাম কমে গেছে। তাই অনেকে কুরবানির ঈদে পশু বিক্রি করে লাভবান হবার আশায় গত এক থেকে দেড় বছর পশু লালন পালনের পর বিক্রি করলে লাভের মুখ দেখছেনা খামারিরা।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।