।। এম আর আয়াজ রবি।।
চাঁদে নামল ভারতের চন্দ্রযান-৩, তাই ভারত এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের পরেই চাঁদে অবতরণকারী দেশের নাম ভারত-যা পৃথিবীর চতুর্থ সফল চন্দ্রজয়ী দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দেশ হিসেবে আমরাও সেই গর্বে গৌরবান্বিত।
মোটামুটি মাত্র ৬০০ কোটি রূপি ব্যয়ে ভারতের এই সফল চন্দ্রাভিযান বাংলাদেশসহ আশে পাশে বিভিন্ন দেশকে নিশ্চয়ই উজ্জীবিত করবে। মেড ইন ইন্ডিয়া, ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনায় এই অভিযান, অবশ্চয়ই প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী।
বিশ্ব নেতৃত্বে বা বিশ্ব মোড়ল তকমা পাবার দৌড়ে অন্যান্য পরাশক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত। শিক্ষা-প্রযুক্তিতে ভারত কতটা এগিয়ে গেছে তা আমাদের কল্পনাতীত। কিন্তু পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত যতই এগিয়েছে, আমরা ততই পিছিয়েছি তা বলার অপেকঝা রাখে না! সারা বিশ্বের ৫০০ ভার্সিটির মধ্যে কোন ভার্সিটির যেখানে স্তগান নেই, এশিয়া মহাদেশের ২০০ ভার্সিটির মতো ধ্যে বাংলাদেশের কোন ভার্সিটির স্থান না থাকাটাই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কত নাজুক অবস্থা! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমাদের দেশ পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ববর্গ বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, উৎকর্ষতায় তেমনি আগ্রহী নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুল ধারার রাজনীতির অঙ্গ সংগঠনগুলোর সক্রিয় লেজুড়ভিত্তি তৈরির কাজেই রারা বেশি ব্যস্ত। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্যবর শিক্ষকবৃন্দ যিনি যত বড় রাজনৈতিক দলের ধ্বজাধারী হিসেবে কাজ করতে পারেন, উচ্চ মহলকে পরিতৃপ্তি দিতে পারেন, তিনি তত পদ পদবী ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বেশি পাবার ব্যস্ততায়মগ্ন থাকেন।
ভারতের একজন পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালামের জীবনযাপন দেখেন, বক্তৃতা শোনেন,বই পড়েন-উনার সুন্দর ও বাস্তবমুখী চিরন্তন বাণীগুলো পড়েন। এগুলো অজানা এক সুখানুভূতি মানুষকে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যায় নিরবধি!
আমাদেরব দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে দৈন্যতা চলছে তা আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষা কারিকুলাম যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত করা তো দুরের কথা, অবিবেচনাপ্রসূত বা কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া কোথাকার কোন বুদ্ধিজীবি গংদের প্ররোচনায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে আজ তলানীতে ঠেকিয়েছে! হাতুড়ে ডাক্তারদের হাতে পড়লে যেমন রোগীর আর বাঁচার আশা ম্রীয়মান হয়ে যায়, ঠিক তেমনি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ এক অশুভ চক্রের খপ্পরে! আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সত্যিকারের কোন অগ্রগতি নেই, আছে ভাওতাবাজির অশুভ প্রয়াস।
৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারত সফল চন্দ্র অভিযান শেষ করলেও, সেই ৬০০ কোটি টাকা আমাদের কাছে কোনো টাকাই না। যেখানে দূর্ণীতির খবরের শিরোনাম হাজার হাজার কোটি টাকা, সেখানে ৬০০ কোটি টাকা একান্ত নস্যিমাত্র! আমাদের দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা দূর্ণীতির শিরোনাম হলেও, ৬০০ কোটি টাকার দূর্ণীতির খবর আজকাল পেপার পত্রিকা ও টিভির শিরোনামও হয় না!
লেখক: কলামিস্ট, পরিবেশবিদ ও মানবাধিকার কর্মী। জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব ও বাংলাদেশ সমাচার পত্রিকার প্রতিনিধি।